চা-পাতা - ৯৭
সম্পাদকীয়
২০২১ সালটাও শেষ । ২০-২১ দুটো ভয়ংকর বছর আমরা অতিক্রম করে ফেলেছি । আমরা মৃত্যুর সাথে বন্ধুতা পাতিয়ে নিয়েছি এই দু'বছরে। কত প্রিয় মানুষ না ফেরার দেশে চলে গেছে।
কত নতুন নতুন শব্দ আমাদের শিখতে হয়েছে। সেই শব্দগুলো এর আগে প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়েই পড়েছিল স্টোররুমে। তাদের ধুয়ে-মুছে নিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের জীবনে।
আবার নতুন বছর আসছে। নতুন আশা জাগছে। চলুন নতুন উদ্যোগে বাঁচতে শুরু করি আবার।
ক বি তা
সুমিত পতি
সম্পর্ক
সব সম্পর্কে আগুন জ্বেলে পোহাব, কোন সম্পর্কে কত উষ্ণতা
শীতের জন্য উপযুক্ত সম্পর্কগুলো বাছাই করে বাকিদের বিদেয়
শীতে একটু উষ্ণতা চাই, শীত এলেই একা হয়ে যাই, বড্ড একা
বেড়ে যায় মনের খিদে, পেটের খিদে, বিছানা - বালিশের জিজ্ঞাসা
' তিষ্ঠ ক্ষণকাল' বলে চুপ মেরে গেছে অসফল সম্পর্কে
কারো চুলের ছটা; সালোয়ারের জমে থাকা অসহায়তা
প্রতিনিয়ত উপড়ে নিয়েছে ভালো-মন্দ হিসেবের ক্ষমতা
মন চেয়েছিল এক আর আমি খুজে গেছি খালি ব্যাকরণের শুদ্ধতা।
সম্পর্কে ব্যাকরণ মেলাতে গিয়ে অতর্কিতে হারিয়ে গেছে সব সুতোগুলো
যাদেরকে টান মারলেই খালি আওয়াজ ওঠে বিবর্ণ সব দিন-কালের
সরে যায় প্রিয় মুখের টান ; সম্পর্ক জুড়ে খালি বিষন্নতার গান।
********************************
দেবমিত্রা চৌধুরী
মিউট্যান্ট
আমি জানি কিভাবে তোমার মুখ, অন্ধকারে নেমে যাওয়া হাসি- অপেক্ষা করে বিশ্রামের।
আমি জানি কখন তোমার, সব রক্ত হাল্কা হয়ে যায়।
আমি জানি কখন তোমার কাছে অসংলগ্ন মানুষেরা আসে আর ওদের জিভ থেকে গোলাপি চিৎকার ফেলে যায়।
তবু তুমি দুপুরের ঘুমের মতোই সুন্দর,বেদনারহিত,
মিউট্যান্ট...
************************************
অরণ্য আপন
সব রাস্তা তার দিকে ফিরে যায়
আমাকে ছেড়ে গিয়ে যে ভালো আছে, ভালো থাকুক
যার ঘরবাড়ি জমিজমা খেয়ে দিয়েছে যমুনা, সেও তো আছে বেঁচে
আমাকে দুঃখ দিয়ে সে যদি পায় দেখা সুখের, পাক না নেচে!
বাড়ির নতুন জামাইয়ের মতো আমার বুকে দুঃখ আসে যদি আসুক
মন যদি তারে ডাকে, মানা করব না, তারে ডাকুক
শিমুল গাছের হাওয়া যদি দেখে ফেলে চোখের জল
তাকে জড়িয়ে ধরে বাড়াব বেঁচে থাকার বল
তার জন্য মানুষ যদি আমাকে পাগল জানে, জানুক
ভালোবাসা এমনই, জিকিরে দোর খোলে না
আবার বন্ধ দরজায় জীবন ধরে মাথা ঠুকে মরে
হেরে যাওয়া ভোটের মার্কার মতো আমার অবস্থা
বকরি বাঁধা ছেঁড়া দড়ির মতো আছি পড়ে
আমি ছিলাম লেলি কুত্তো, খেদে দিয়েছে তবু গেছি ফের
না গিয়ে থাকতে পারিনি, ভালোবাসা ছিল ঢের
**************************************
অনন্যা দাশগুপ্ত
শীতকাল ও কয়েকটা বাদামী পাতা
সময় নামক শহরে যখন গণবিবাহের কানাকানি, তখনই চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা কাপের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
একেকটা শীতে নতুন সোয়েটারের
মতন তোমার শরীর খোলস ত্যাগ করছে অনবরত।
বাদামী রঙের পুরুষ এসে ভীড় জমাচ্ছে নতুন ক্যাফের চেয়ারে
আর চায়ের দোকানে আগুন কমে আসছে উনুনে।
কয়েকটা পুরুষ আর কিছু মহিলা
শরীর সেঁকে নিচ্ছে অবাধ্য আঁচে...
শীতকাল তুমি কমলা রোদের
বার্তা বয়ে আনো-
শহর ততক্ষণে
খোলসে লুকোনো থাক।
*************************************
সাহানুর হক
অনন্য আরাম
ভারী বৃষ্টি হবে এখন
আমি অবাক হয়ে শুনি
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া নদীর ডাক
যেমন মেঘ চেনে বৃষ্টিকে তেমন বৃষ্টি চেনে নদীকে
আর সেভাবেই আমি তোমাকে ও তুমি আমাকে
বৃষ্টি আসার আগে আমাদের গলিতে আয়ু নামে অনুভবী সনেটে
আমরা ছুটে যাই খোলানে
চার হাত মেলে ছায়া দেখি আঙিনায়
কাহিনীর মতো
আকাশ তখন স্থির হয়ে দেখে আমাদের চিরচেনা
তবু অচেনা গানের তাল, নৃত্য, মাতামাতি
এমনই তো কথা ছিল
এমনই থাকুক
কাছাকাছি থাকুক এই অনন্য আরাম
আপাতত ওপারে থাকো শোকের উৎসব!
*************************************
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন