চা পাতা * ৭৪




সম্পাদকীয়

'কবি' শব্দটায় আলাদাই এক জ্যোতি আছে। আলাদাই এক মহিমা।  তাই কোন কবির নামের আগে কবি শব্দটি ব্যবহার করে ফেলার পর তার অধ্যাপনা বা ডক্টরেট এর উল্লেখ তেমন চকমকে হয়না। আমরাও মনে মনে বোধহয় খানিকটা বিরক্ত হই। 'কবি - অধ্যাপক অমুক মিত্র' যদি পরিচয় দেওয়ার স্টাইল হয়, তবে 'কবি- কৃষক, কবি- ম্যাকানিক অমুক ঘোষ' বলাই বা হবে না কেন। কবিতার দিক থেকে কবির পরিচয় যখন এক লাইনের অধিক হয়, তখন তার অন্যান্য যোগ্যতা বা অর্জনের পরিচয়গুলির ব্যবহার  বেশি যথাযথ বলে মনে হয়। যাইহোক আমি ভাষা বিজ্ঞানী নই, যা মনে হল লিখে দিলাম । আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য আমাকে আমার ভুলটা নিশ্চই  ধরিয়ে দেবে ।



কবিতা




মনোজ পাইন

চল্লিশ পেরোলে

        

সে এসে আমাকে  স্বস্তি দিল।

উঠান জুড়ে দাপাদাপির আগেই

তাকে সটান টেনে নিয়েছি ঘরে।


কোথায় বসাবো তাকে?

দিকভ্রান্ত নাবিকের দশা আমার!


বৌকে এড়াবো বলে

একবার ভাবি পুরানো দেরাজ খুলি!

সেখানে তখন শীতের কম্বলে ঠাঁসা।

ভাবলাম তাকে নিয়ে চুপিচুপি

কেটে পড়ি নির্জন পাহাড়ের রির্সটে।


কোথায় যে রাখি এই স্বস্তিদায়িনী মেয়েটিকে?

আসাঢ়ের মেঘসকল ওর পিছুপিছু

ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে।

আমার বৌ ওদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য

ছেলের স্কুল ড্রেস,, আমার অফিস ব্যাগ নিয়ে ব্যস্ত।


হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এল

সেই বুদ্ধিতে মৌসুমি বৃষ্টি হল সারারাত

বৌ ঘর থেকে চিৎকার  করে সতর্ক করল-

"দুদিন আগেই চল্লিশ পেরিয়েছ তুমি

এই বৃষ্টি ভালো নয় সোনা"


এদিকে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে

জ্বলে উঠেছে আগুনের গ্রাম!

যারা চল্লিশ পেরোয়নি তারা কীভাবে বুঝবে

মৌসুমি ও বৃষ্টি আসলে একটি মেয়ের

 দু -দুটি নাম।





মৌমিতা পাল

হ্লাদিনী

 কিস্তি - ২ 


রাত  পার করে ভোরকে ফাঁকি দিয়ে  ঘরে ফিরেছে হৃদি। বিছানায় আয়ান জেগে বসেছিল। এটা আশা করেনি সে। বুঝল যে আয়ান সব বুঝেছে,কানাঘুষো শুনে থাকতেও পারে । কিন্তু  তাতে তার কি ! আয়ান আজ প্রথম হৃদিকে বুকে টেনে নিল। কিন্তু  তাতে  হৃদির অতীতের জাগরণের ভোরগুলো ফিরে  তো এলো না। বরং সবলে দংশন করল সেসব অতীত স্মৃতি । এক লহমায় আয়ানের বুক থেকে ছিটকে  গেল সে।আগে চাইত ,ভীষণভাবে  চাইত,কিন্তু  আজ আর নয়। কানু আছে বলে নয়,কোন কিছুর বিনিময়েই আর নয়।অন্য  ভালবাসার পেছনে ছুটে  আয়ান ওকে ভালোবাসায় বাঁধবার প্রয়োজন মনে করেনি কখনো। আজ তাই অবশিষ্ট  রয়েছে শুধুই মায়া আর দায়িত্ব। হৃদি শাড়ি বদলে গরুকে বিচালি দিতে গেল। মনে এল কানুর গতরাতের মুখ।ছেলেটার ভীষণ জ্বর,তবু ছুটে এসেছিল কুঞ্জে শুধু একবার হৃদিকে দেখবে বলে। কালো ছেলেটার কপালে তখনো অন্য গোপিনীর চুমতিলক আর গলায় অন্য কারোর বকুলমালা। এসবের পরোয়া করে না হৃদি।ও জানে কানু ওর প্রেমিক,তবে এখনো ওকে ভালবাসে না। হয়তো ওকে ছেড়ে  চলেও যাবে কোনদিন। তবু এই মুহূর্তগুলোতে বাঁচতে চায় ও। কানু ওর এমন বন্ধু  যাকে সবটুকু  সঁপে  দেবে ও। কালো ছেলেটার শরীরের তাপ নিজের ভেতর নিয়ে  ধীরে ধীরে  ওর মাথাটা বুকে টেনে  নিল মেয়েটা। ওর ঠোঁটে  একে দিল আবেগের সমস্ত  আদর।



বন্ধুরা-নৌকায় চেপে আমোদী মাঝির আনমোনা গান শুনছিল হৃদি। আজ হাঁটে যেতে দেরী হয়ে গেল। কতটুকু  বিক্রি হবে কে জানে ! মাঝি একমনে গাইছিল-

          সয়না রে এ মন সয়না

          রয়না রে এ প্রাণে প্রাণ রয় না।

হৃদিও সত্যি প্রাণ রাখতে চায় না আর। সেদিনের পর থেকে কানুর একটাও খবর পায় নি। পাগলের মতো এর ওর কাছে  জানতে  চেয়েছে নিজে বদনাম  হতে পারে  জেনেও । কানুর ঘরতক গেছে।আঙিনা থেকে ফিরে  এসেছে। পাগলিনী  হৃদি।কানুই ওর সম্বল। বিনাহাসি বাঁচা যায়,কিন্তু  বিনাশ্বাস? আকুল হয়ে একলা কুঞ্জে বসে কেঁদেছে আর ভেবেছে এবার  ঐ কালো ছেলেটাকে  হাতে পেলে আর ছাড়বে না। আদরের আগলে বেঁধে রাখবে। চিন্তার  রেশ কাটল হঠাত ।দূর নৌকায় কানু ওর পিছু নিয়েছে। একবুক হাসি নিয়ে  হৃদি নৌকা ফেরাল ফের  ঘরঘাটের দিকে। আসলে প্রিয়কে কাছে পেলে মরার আগেও বাঁচতে চায় জীবন।





নাদিরা

ছায়া ছোট হলে 


অবশেষে আর সব ধূলোবালি ঝেড়ে আত্মসমর্পণ করি 

মাথার কাছের বালিশখানা ছোট হতে হতে মিইয়ে  গেছে, 

বড়ো গাছ ঝড়ে এলোমেলো -- ছায়াখানি নিভে নিভে আসে 

জন্মের সময় বুকের ভেতর একটি মরুভূমি - দুটি উত্তাল সাগর এনেছি ; 

ধীরে ধীরে উগড়ে দিতে থাকি ভয়ঙ্কর ভাবে -- অনিচ্ছায় 

বটেদের ঝুড়িগুলি কর্কট রোগাক্রান্ত এখন__ দেহ মুছে দিতে হবে । 


আমার অশ্বথরা সাইক্লোনকে তোয়াক্কা করেনি 

তবে সন্তানের ফাটা পায়ের গোড়ালি দেখে কেঁদেছে। 

আমাদের বটগুলি আজীবন স্বচ্ছ পাতা ও পাখিজন্ম দিয়েছে , 

আপাতত দেশের বুকে মৃত্যুর রঙ দেখে শ্বাসেদের মিছিলে নেমেছে। 

আমি রাজপথ বেয়ে হেঁটে যাই ; গাছের গোড়ার মাটিকে দেখবো 

উর্বর মাটিতে শেকড়সহ মানুষের ছবি আঁকতে যাই ।






বিকাশ দাস (বিল্টু)

চাঁদ ও অলিখিত গদ্যকথা:


এত কলঙ্ক চাঁদের গায়ে

তবুও চাঁদশোভায় চাঁদসভায় 

মত্ততা মাখি। কলঙ্কিত চাঁদের 

রূপালী চাঁদরে নিজেকে ঢাকি


এত এত অভিনয়, এত এত খেলা

ভেসেছে কতনা অবজ্ঞার ভেলা

অবশেষে

       মিথ্যের আড়ালেই লিখেছি

       চাঁদ ও আমার অলিখিত গদ্যকথা




সৌরভি রায়

তুমি, তুমি, তুমি আর তুমি


এলে তো ফিরে? দূরে কেন?

ইচ্ছে নেই? মাথা নত?

কি যে নাম তার? নতুন সে প্রেমিকার?

চোখ বড়ো, চুল বড়ো, গাল ভরা হাসি দেয়।

যার জন্য গেলে ছেড়ে, গুণে নিয়ে আয় ব্যয়।

ও বাবা, মুখ ভার? রাগ এখনও নাকে কেন?

রাখেনি সে আদরে? বলে নি কথা কোনো?

কতবার বললাম যেও নাকো, যেও না। কিন্তু

শুনলে কই? এমন বসন্তে গেলে চলে।

আমি চুপ করে কেঁদে রই।

জানি গো জানি। যা জেনেছি এত বছরে তোমাকে, হ্যাঁ তোমাকে। 

অত সোজা নয় রাখা। হ্যাঁ তোমাকে, আদরে আর আবদারে।

বুঝলে তো, আমি কি? ভালোবেসে রেখে দিই। হ্যাঁ তোমাকে গো তোমাকে। 

রাখল না সে একদিনও, এ ভরা বর্ষায়।


ঘামছো কেন? হাত মুখ ধুয়ে এসো। 

পাঞ্জাবীটা রেখে দাও বালতিতে। ধুয়ে দেবে

এ দাসী। হ্যাঁ আমি আছি যে।

কাছে এসো। মাথা রাখো কোলেতে। 

জানি ফিরে আসবে। 


শোনো,

এ যেন কত হলো? ১০০ তম ফিরে আসা।


------------------------------------------------------------------------------------------

চা পাতা সাপ্তাহিক (ব্লগজিন)

সম্পাদক- তাপস দাস

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা-পাতা ৯১