চা পাতা।। ৫৯

চা পাতা 
                   (সাপ্তাহিক) 
           দ্বিতীয় বর্ষ * সংখ্যা - ৫৯ 







  মারণ ভাইরাস আর গৃহবন্দি জীবন আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিল এই অল্পদিনেই। বেঁচে থাকতে হলে মূল যে প্রয়োজন খাদ্য - বস্ত্র - বাসস্থান ঔষধ আর শিক্ষা। অথচ বাড়িকে আমরা বস্তুভান্ডার বানিয়ে তুলি ক্রমশ। প্রয়োজন মেটাতে সারাক্ষণ প্রকৃতিকে শেষ করে দিতে থাকি। আমাদের অত্যাচারে প্রকৃতির ছটফটানো - কান্না , যা আমাদের কানেই পৌঁছায় না। কয়েকমাসের স্তব্ধতায় দেখুন প্রকৃতি কী সুন্দর সেজে উঠেছে । রোজ বৃষ্টি হচ্ছে। গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া - রাধাচূড়ায় ভরে উঠেছে। প্রকৃতির কান্নায় আমরা গলা মেলাইনি । তবু প্রকৃতির এই সুস্থতা আমাদের অনেক দিনের সুস্থতার কারণ হবে। আসুন সবার মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্তব্ধতাকে ভালোবাসি। সবার সাথে থাকব বলে মাঝে মাঝে একা হয়ে দেখি। দু'পা দূরে দাঁড়িয়ে হাজার মাইল পেরিয়ে আসি ।

     




সুবীর সরকার

আলো

আপাতত নিরাপদ হাড়িয়া ম্যাঘের

                   নিচে

ভুবনমায়ার আলো

অপলক জলাশয়

সেপ্টেম্বরের পৃথিবীতে উজান দ্যাশের

                   পাখি

*************************************


শুভ্রদীপ রায়

আমি ভাল নেই প্রিয় বান্ধবী

" দিল সামহাল যা জারা,ফির মোহাব্বাত করনে চলা হ্যায় তু"

একটা টিউন...অটো সেট...ঘুরছে অনবরত...লুপ...ফাঁদে পড়ে গিয়েছি...যেন চোরাবালি।

কথা চালাচালি বন্ধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। অসাক্ষাতে দূরত্বও সেমি. থেকে হয়ে যায় কিমি.। হঠাৎ আবার খুলে যায় বারতার ফ্লোগেট। অনেক যত্নে পুঁতে রাখা মৃতদেহ খুঁজে পায় ভাইটালিটি ফোর্স। সটান উঠে বসে...রিটার্ন অফ দা রিপ্রেস...

একটা ছাদের তলায় লুকোতে চাইছি অবিরত। ভিত স্থাপন করতেই সরে সরে যায় মাথার ওপরের চাঁদোয়া।অন্ধ ভরসার নাম বিশ্বাসভঙ্গ। আমিও কি অবিশ্বাসের খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে নেই? তুমি তো নগরজীবনের হইচইয়ে হাঁপিয়ে উঠছ। সাড়ে পাঁচশো কিমি. দূর থেকে ঠিকই সেই হতাশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু আমাদের হাত পায়ে তো শিকড় গজিয়েছে নতুন ভাবে।শুধু কথা ছুড়ে ছুড়ে মারা ভিন্ন অন্য উপায় নেই।আসলে আমার অপুষ্ট নদীবিলাস তোমার ভরাট গঙ্গাযাপনের পাশে কখনই ধোপে টেকেনা।

কিন্তু কথা ছিল মৈত্রীর অন্য সংজ্ঞা বানাবো আমরা। হাজারটা মুষলপর্বও ভাঙতে পারবেনা আমাদের চক্রব্যুহ।এমনই স্বাধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ছিল আমাদের। তারপর প্রতিশ্রুতির শরীরে শ্যাওলা জমতে শুরু করে। অধিকারের বসতভিটার ওপর আছড়ে পরতে থাকে অভিমানের অগ্নুৎপাত। চিড় ধরতে থাকে অপেক্ষার বাঁধে। হড়কা বাণে ঘরে ঢুকে পড়ে অজস্র বেনোজল...থইথই করে দূরত্বের কাঁদাপাঁক। আমাদের নিয়ে ডুবে যায় অতল ঘূর্ণিবিভাব। প্রেসক্রাইবড সামাজিক স্লিপিং পিল-- কয়েক শতাব্দী ঘুম পাড়িয়ে রাখে একসাথে।তবু একট ক্ষীন আগুনের আভাসের নিভতে নিভতে বেঁচে ওঠা। আজ তাতে প্রবল ঝড়ের আশ্বাস দিতে সাধ হয়

আমি ভাল নেই প্রিয় বান্ধবী... উড়ে আয় কোথাও থেকে... জুড়ে যা আমার ভাঙা ডানায় পালকের মত... একটু আগুন ছুঁইয়ে যা আমার শৈত্যশহরে।

" রঞ্জিশে সহি
দিল হি দুখানে কে লিয়ে আ...
অব তক দিল-এ-খুশফহম কো তুঝসে হ্যায় উম্মিদে
ইয়ে আখরি শম্মে ভি বুঝানে কে লিয়ে আ....."


*************************************


নীলাদ্রি দেব 

হাফ টাইমের পর লেখা কবিতা 

এক. 
মঞ্চ. একটা মঞ্চ. চারকোণে ঘি-এর প্রদীপ জ্বলছে. শিখা বাড়ছে, কমছে শ্বাসের হাওয়ায়. মানুষ ঘিরে আছে চারদিক. রাত ঘন, আরও ঘন হচ্ছে. একটা চিৎকার মঞ্চ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে মানুষে. 
প্রদীপের আলো যাঁদের ঘিরে রাখছে, চোখের নিচে অন্ধকার. একপেশে দেখতে দেখতে চিৎকার ও নিরবতার মাঝে কোন সীমানা আঁকতে পারছি না. সীমানা তো স্বপ্ন ঘিরে থাকে. কিন্তু কার্তুজ জমাতে জমাতে উপচে উঠছে আস্তিন. ভুলে যাচ্ছি, ঐ চিৎকার আসলে মানুষের. 
মঞ্চ একটা কাঁচ. এখানে দাবাবোর্ড, বোতাম প্রতিফলিত হয় শুধু. তবে, কেন এই অমূলক চিন্তা, চিন্তার অস্ফুট আওয়াজ? 
শূন্য কাজের শেষে হাতের চেটোয় মাত্র কয়েক ফোঁটা জল, তুলে নিয়েছি অভ্যাসের দোষে. কেটে গেছে ঘুড়ি, বেলুন, পিছুটানের সুতো. জড়িয়ে ধরেছে আলো. যে আলোর ভেতর কেমন একটা মনখারাপ, লুকানো কষ্ট আছে. কষ্টই কোথাও একটা স্বর হয়ে ওঠে. মনে হয় কুঁয়ো. নিচে, আরও নিচে নেমে আসি. 
দেখি, কুঁয়োর নিচেই আরেকটি মঞ্চ. যার মাথার উপর পর্দা. তার চারপাশে দর্শক. গভীরে শেকড়. ছুঁয়ে নিলে হাততালির শব্দটুকু মিলিয়ে যায়. মিলিয়ে যায় মুখ, মুখোশের ভার. 
আলো. তীব্র হয়ে ওঠে.

দুই. 
চৈত্র আর বৈশাখের চেনা দুপুরগুলো বদলে যাচ্ছিল. গতবছরও মাঝে মাঝেই স্মৃতি থেকে তুলে আনছিলাম খসে যাওয়া পাতা, আমের শুকনো ডাল. একটা সোজা, ভীষণরকম সোজা রাস্তা ঢেকে ছিল আমের মুকুলে. ঝড় শেষে হেঁটে গেলাম. হাওয়াইয়ের দাগে যতটুকু মাটির ত্বক বেরিয়ে আসছিল, দেখছিলাম তীব্র কোনো কান্না লেগে আছে. যেন অক্ষরের স্তূপ দিয়ে ঢাকা. বারান্দা পেরিয়ে ঘরে আসা মাত্র তীব্র এক বাজে ছানা বেড়ালের চোখে প্রথম যে ভয় দেখেছিলাম, তার ওপর গত এক বছরেই কত কত স্তর জমে গেছে. আজ আমাদের চোখে ভয়. ঠিক একইরকম. বাইরে চমকে উঠছে বিদ্যুৎ. তীক্ষ্ণ ছাটের বৃষ্টি. ছাতা নিয়েও বেরিয়ে যেতে পারছি না উঠোনে. যদিও আমের মুকুলের মতো, শুকনো ডালের মতো, যা সব ঝরে যাচ্ছে সময়ের দোষে... তা কি আদৌ সংখ্যা? নাকি আকার? কিংবা আকার ও অস্তিত্বের পরে, ঘরের কোণে লেগে থাকা আবেগ? ধরে নিচ্ছি, কিছুই নয়. ধরে নিচ্ছি, বীজগণিতের মাঝে হঠাৎ এসে জুড়ে যাওয়া চিহ্ন. সূত্র বলছে, সংখ্যার গুরুত্বের পাশে অসংখ্য আধখাওয়া আপেলের স্তূপ. পচে যাচ্ছে পিচের ওপর. ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে বোঁটা, সুষুম্নার সুতো. পিঠ ঠেকে গেলে যেভাবে চিৎকার নাভিমূল থেকে উঠে আসে অনন্ত আলোকে, উঠে আসছে. বোধ ও বুদ্ধের পাশে জমা হচ্ছে হঠাৎই ভেঙে যাওয়া একটি বিকেল. এক. দুই. তিন. ভাগশেষ থেকেও উবে যাচ্ছে কর্পূরের দানা.
ঝরাপাতার ঢিবি  পেরিয়ে শেষবারের জন্য তুলে আনলাম স্থির, ভীষণ স্থির একটি শব্দ. যার এক পাশে এখনও কাঁচা মাটি লেগে আছে. এক পাশে আলো, বিন্দু বিন্দু শিশিরের মতো.

*************************************



সঞ্জু কুজুর 

হে আগস্ট শুধু তুমি নেই 
              
এখনো পাহাড়ী বস্তির গাঁয়ে তাজা রক্তের দাগ লেগে আছে । 
হাতে গুণা দু-চারটি বাড়ি নিয়ে যে পাহাড় সাতরঙা পাহাড়। 
বিকেল বেলার বুনো রাস্তাগুলি আরো সরু হয়ে যায় 
কালভার্টের নিচে বহতা খরস্রোতা জল 
ফেরারী পথে চারটি চোখ । বাইক সফর । জঙ্গল খুশবু ।  
এ সবাই আমাদের মোবাইলের সেলফি চিত্র হয়ে থাক । 

আসল যে রক্ত তার দাগ শুকাতেও সময় লাগে 
কিন্তু মানুষের চেহেরা বদলাতে সময় লাগেনা .....

এ চিত্রটিতে গাছপালা নদী নালা সবাই আছে 
হে আগস্ট শুধু তুমি নেই ।

************************************



রুবাইয়া জেসমিন 

দারিদ্র্য

ঝুপঝুপ বৃষ্টি দাপট দেখিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে গেল।
বহুদিন ছবিতে দেখেছি স্নানের ঘরে কিভাবে পতঙ্গও হয়ে যায় সাদা বলাকা,
ডানাঝাপটে ওড়াউড়ি করে।
শরীরে মোলায়েম মেঘ ঘষে।

আমরাও স্নান সেরে উঠলাম
হঠাৎ নেমে আসা স্নানের ঘরে।

*************************************


সৌরভি রায়

বিষাদ

রঙিন প্রজাপতিরা মিথ্যে বলে। সবুজ ঘাসের পরে পা রেখে মিথ্যে বলে আলো। ফ্যাকাশে বিকালে একফালি রোদ আর গামছা ভ'রে শিল কুড়ানো - ওরাও মিথ্যে বলে।

স্মৃতিরা জলে ভাসে। রাজাদের বিয়ে হয়। বিয়েতে সানাই বাজে। কনে বারবার কাঁদে সানাইয়ের সুরে। এ সানাই কিছুক্ষণের জন্য সত্যি বলে, বিচ্ছেদের কথা বলে। প্রতিদিন সকালে একটা শালিক খারাপ খবর আনে। ঠিক আনে না, আমিই ভেবে নিই। এখন একলা শালিকও মিথ্যে বলে। কালরাতে যাকে মনে পড়েছে, কথা ছিল না তবুও... সেও কি মিথ্যে নয়?

এখন কেউ এসে সত্যি বললে বিষম লাগে।

*************************************

চা পাতা 
সাপ্তাহিক ব্লগজিন
সম্পাদক- তাপস দাস
ইমেইল - tapsds00@gmail.com     

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা পাতা সাপ্তাহিক