চা পাতা। ৫৭
কবিতা কিছু দেয় না। তবু অনেক কিছু দেয়। কবিতা ঔষধের পাশে বিশ্বাস হয়ে বসে থাকে। ভরসা জোগায়। এই সময়টুকু আমরা পেড়িয়ে যেতে পারব কবিতাকে সাথি করে। অসুস্থ মানুষের মুখে লেপে দিতে কবিতার সৌন্দর্য । সবাই ভালো থাকুন। সেরে ওঠো প্রিয় পৃথিবী।
--------------------কবিতা-------------------------
দুটি কবিতা * অঞ্জন দাস
পুরুষ নদী
রং ছবিতে কুঁড়ির ভেতর ফুল আঁকোনি
গানের ভেতর মন লেখোনি গায়ক পাখি
ভাত পড়েছি খিদের ভেতর রাত পড়িনি
কেউ ফেরেনা ফিরেই যদি চিনতে পারো
ফিরেই যদি চিনতে পারো কেউ ফেরেনি
কেয়ার বিহিন বছর কুড়ি সেই রয়েছে
যার অহমে পুড়িয়ে ছিলে পুরুষ নদী
শ্রেষ্ঠ দেহের আগুন নেশায় চাইবে তাকে
শরীর বিহীন দাও কী পাথর কাতর বাঁশি
বন ভুলিয়া খাঁচা পাখির প্রেম শিখে যাই
ত্যাগের ভারত শক্তিশেলে সিতা'ই জানি
রং ছবিতে কুঁড়ির ভেতর ফুল আঁকোনি
লালন ফিরবে বাড়ি
জানালায় মুখশুদ্ধি ভেঙে পড়ে গাছের বাতাস
সন্ধ্যা খুলে জলগান ঈশ্বরী গায়
পলায়ন কবিতার হেও থাক কাঁচের চুড়িতে
ভাঙা চুড়ি প্রতিবার কবিতা শোনায়
মৃত কবিতার চারা ভেঙে দিও শ্মশানের গায়ে
লালন ফিরবে বাড়ি ভাঙা পথ রেখো
বাঁশিতে নেমেছে রাধে নদী ও নেমেছে পায়ে
দেহের ভেতরে দেহ ব্রাহ্মীরস মেখো
------------------------------------------------------------------
সুমিত পতি
স্বার্থপর
আজকের কুয়াশা চাদরের দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন হাত
তা থেকে এক হাত নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি বাবাকে
এক হাতে রিপু করেছি ভাইয়ের প্যান্ট, বোনের সালোয়ার
স্রোতে ভেসে যাওয়া পরিত্যক্ত মালা তুলে সাজিয়েছি মাকে
বাকি দেড় হাতে ঢেকে দিয়েছি প্রেমিকার বুক।
তা থেকে এক হাত নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি বাবাকে
এক হাতে রিপু করেছি ভাইয়ের প্যান্ট, বোনের সালোয়ার
স্রোতে ভেসে যাওয়া পরিত্যক্ত মালা তুলে সাজিয়েছি মাকে
বাকি দেড় হাতে ঢেকে দিয়েছি প্রেমিকার বুক।
স্বার্থপরের মতো নিজের জন্য রেখেছি
আগামী কালের সাড়ে তিন হাত...।
আগামী কালের সাড়ে তিন হাত...।
-------------------------------------------------------------------
সঞ্চালিকা আচার্য
"চাঁদ ধরা ফাঁদ জানো না রে মন"
বনানী বাংলোর বারান্দায় সেদিন আকাশের যেমন করে গাওয়ার কথা, আপনিও সেভাবেই গেয়েছিলেন। যেমন করে চাওয়ার কথা, ঠিক তেমন করেই চেয়েছিলেন। দু'শো বছর আগে যে ফকির-বাউল ভূতগ্রস্ত বালকের মতো আমার প্রতিটি খোসা সযত্নে ছাড়িয়ে নরম শাঁস আকণ্ঠ পান করে গীতি রচনা করতো, আপনাকে তাঁরই উত্তরসূরি ভেবে দেখিয়েছি সব।
কিন্তু সেই আপনারই রক্তের মধ্যে লোভী শেয়াল ডেকে উঠলো! শহরে ফিরেই কদর্য বাজারে রটিয়ে দিলেন কুৎসা? পাঁচকান করে দিলেন পাতার মর্মরে শালবনের কান্না, যৌথযামিনীর সব উত্থানপতন, কাঁথাস্টিচের রুমালে রুপোলি আগুন মুছে নেওয়ার রূপকথা? পেঁচাদের পাতে কবিতাগুচ্ছ বেড়ে দিয়ে ভোর রাতে ঘুমোতে গেলেন।
অথচ আপনার দু'হাত যতটা পর্যটন জানে, তার থেকে অনেক অধিক শোভা বিছিয়ে রেখেছি। রহস্য গোপন আছে আরও। আন্তরিকের ভেতর মগ্ন না হলে আপনি প্রকৃত কবি নন। তাই ওই মেহগনিরঙা সুসজ্জিত ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনারের সময় রুটির গায়ে অতর্কিতে ব্যর্থতার নুন লেগে গেলে, ভুল করেও ফেলে আসা জোনাকিইনবক্সে আঙুল রাখবেন না যেন।
বৃষ্টি থেমে গেলে পড়ে থাকে আবেগ-জবজবে দৃষ্টিকটু কাদা। ও’সব ভালো লাগে না, আপনি বরং ব্লকলিস্টে চলে যান। যে সবুজ ছেলে এ'জন্মে স্বপ্নপুরাণ লিখবে ব’লে আসেনি এখনো, তার জন্য লাজহোমের আয়োজন করি।
-------------------------------------------------------------------
উদয় সাহা
গিমিক
মধ্যরাতে লেখার ভেতর হাসি ঢুকে গেলে
আমার ধর্মবোধ জেগে ওঠে
এই 'ধর্ম' শোনা মাত্র আপনারা
পছন্দমতো মশলা হাতে তুলে নিলেন --- তাইতো?
জানি৷ আর এসবেই আমার করুণা জন্মায়
মনে পড়ে সেই কবির কথা
যিনি মঞ্চে উঠেই আগুন জ্বালিয়ে দেবার ছলে
কবিতা পড়েন
ওনার পকেটেও একটি মাত্র কবিতা--
প্রিয় কোকিলের সাথে দিনের বেলায় নাইটস্কুল
এর চেয়ে ঢের ভালো উপন্যাস
একটা দীর্ঘ হাইওয়ে, ভ্রাম্যমাণ রঙিন রুমাল,কবিতার ক্যাম্প
দৌড়ে দৌড়ে ছুটে আসবে অক্সিজেনহীন অণুগল্প
এখন ধর্মের জিভে হাসির আর্তনাদ
এখন মধ্যরাত। সহযাত্রীর মোটিফে ঘাম জমছে৷
শেয়াল জ্যামিতি কষে বাঘছাল পরে নেয়...
------------------------------------------------------------------
মৌসুমী চৌধুরী
লকডাউন ক্যানভাস
ঝিমধরা দুপুরে গোল্লাছুট খেলে দামাল বাতাস।
কবিতার বাতিল পংক্তির মতো
শুয়ে থাকে পিচগলা কুচকুচে কালো রাজপথ।
শুধু পা মেলায় না মহানগর।
চুপকথার শান্ত ক্যানভাসটা ছিঁড়ে
ক্ষয়াটে বুড়িটা হাঁকে মা-আ-আ-আ-ছ...
টটকা পোনা, তেলাপিয়া, রূপচাঁদ----
মুখোশ ঢাকা মুখ আর গ্লাভস পরা হাতের
সুচারু সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বাজার-বিলাস।
লক-ডাউন ছেলেটার ফটো-বাঁধাইয়ের দোকান।
অনভ্যস্ত হাত ছাড়ায় মাছের আঁশ।
শৈল্পিক চোখ ঘরে তোলে বাকশস্য----
"একদম টাটকা মাছ, সঠিক দাম।"
মৃত-মাছের চোখে ঝুলে থাকে,
সময়ের আর্তনাদ, করুণ সিম্ফনি!
-----------------------------------------------------------------
মারুফ আহমেদ নয়ন
অর্পিতা রায়
খুব অল্পই তো প্রয়োজন
কে বলেছে তোমাকে এত কষ্ট করতে?
কে বলেছে তোমাকে আমার মন জোগানোর জন্য
আউল- বাউল- ফকির সেজে থাকতে?
ভালোবাসার জন্য এত কিছু লাগে বুঝি?
খুব অল্পই তো প্রয়োজন!
তুমি পারবে রাতের নির্জন রাস্তায় আমার পাশে হাটতে?
তুমি পারবে ওই উচুঁ পাহাড়টির চূড়ায় উঠে আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরতে?
তুমি পারবে জঙ্গলে বন ফায়ারের সামনে বসে ঠান্ডা কফি হাতে নিয়ে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিতে?
তুমি পারবে এক আকাশ মেঘের নীচে আমার চোখে তোমার স্পর্শ জাগাতে?
বললাম না খুব অল্পই তো প্রয়োজন!
তোমার সাথে ভালোবাসার গল্প আমার এ জীবনেই,
জাতিস্মরের গল্পে আমাদের দরকার কি?
------------------------------------------------------------------
চা পাতা সাপ্তাহিক
সম্পাদক - তাপস দাস
e-mail- tapsds00@gmail.Com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন