ধারাবাহিক আত্মজীবনী।। সুবীর সরকার


১৭।

কুয়াশায় হিম হয়ে থাকা বিশাল একটা মাঠ।সাদা পর্দা ঝুলছে।শীতের এক ম্যাজিক আছে।কুয়াশায় খোলা মাঠে দেখতে পাই সার্কাসতাঁবু।তাঁবু ঘিরে আলোর বন্যা।বাজনা বাজে।কনসার্ট হয়।অতিকায় জিপ লাফিয়ে পড়লেই হো হো হাসির সব জোকারেরা।এদিকে ট্রাপিজের খেলা।নেটফড়িঙ্গের মত লাফিয়ে পড়া খেলুড়েরা।ঘোড়াগুলি ছুটতে শুরু করে একযোগে।সার্কাস আমার প্রিয় অনুসঙ্গ।সার্কাস মানেই একটা জায়মানতা।বিস্তার হারানো নদীর উপাখ্যান শুনতে বসে যাওয়া।

সমস্ত জীবন শীতকাল মানেই জানতাম বুঝতাম সার্কাস আসছে।আমাদের প্রান্তিক শহরে।শিশিরের শব্দের সাথে মিশে যেত বাল্যকালে ডোরাকাটা হলুদ বাঘের হুংকার যা ছড়িয়ে পড়তো সারা শহরে।শরীরে শিহরণ জাগতো।দিনের আলোর ভেতর ঘুরে বেড়াতো ‘নটরাজ সার্কাসে’র সেই সব বাচ্চা হাতির দল।আমরা হাততালি দিতাম।

সার্কাসের ট্রান্সে জড়িয়ে জড়িয়েই কিভাবে বড়বেলায় চলে এলাম!বাঘ হাতি সব উধাও হল।কিন্তু সার্কাস থেকে গেলো।সার্কাসসুন্দরীদের মোমের মতন আঙুলে পিছলে যেতে থাকলো হেমন্তশীতের নরম আলো।এভাবে মায়া এলো।সুপুরিবনের ভেতর কারা বুঝি বিছিয়ে রেখে গেলো মস্ত একটা গানবাড়ি।

১৮।

অনেক বছর পরে ‘আকন্দ সার্কাসে’র জোকার জিয়ারুলের সাথে সখ্যতা জমেছিল আমার।জিয়ারুল আমাকে শোনাতো তার কান্না আর অভিশাপের এক জীবনের গল্প।ধাক্কা খাওয়া যাপনের গল্প।বামন হয়ে বেঁচে থাকবার অসহায়তার প্রতিবেদন শুনে শুনে আমিও তাড়িত দুঃখের মত বাতাসের ব্যপ্ততায় কিংবা নদীর বাঁকে বাঁকে আড়াল খুঁজতে চেয়েছিলাম বারংবার।

রিংমাষ্টার সিগারেট ধরালেই একটা রহস্য প্রবল হয়ে উঠতে থাকে।তখন জোকারের টুপিতে জুড়ে বসে উড়ে আসা ময়ূরের পালক।আর সার্কাস তো সকল দৃশ্যই ধারণ করে অবলীলায়।মিস সিমির নরম কাঁধে কঠিন আঁচড় মেখে নিজেদের জাত চেনায় লাল টিয়ার ঝাঁক।এভাবেই উৎসব নেমে আসে।ঝুঁকে পড়া শরীর নিয়ে পুরোন তাঁবুতে ঢুকে পড়তে থাকেন ‘কমলা সার্কাসে’র হাতির মাহুত।

জীবন বহমান।আলো নিভে যায়।আলো জ্বলে ওঠে।আর সার্কাসতাঁবুর নিচে বিষণ্ণ বেহালা বাজে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা-পাতা ৯১