আত্মজীবনী। কবি সুবীর সরকার


১৫.

আমাদের জীবনের ভেতর কি অসম্ভব এক মায়া!মায়ায় জড়ানো যাপন!

কোন এক লোকমেলায় আমি দেখি শরীরে নাচ নিয়ে কন্ঠে গান নিয়ে হাতিডোবার নদীবাঁকে গানের পর গান।নাচের পর নাচ নেমে আসছে_

‘গাও হেলানি দিয়া নাচ রে গোলাপী

গোলাপীর পিন্ধনের শাড়ি গোলাপীকে দিমু না

গোলাপীর হাতের খাড়ু গোলাপীকে দিমু না

কমর হেলানি দিয়া নাচ রে গোলাপী’

এই যে,এত এত দেখা আর মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকা; বেঁচেবর্তে থাকাটা আমাকে বিষ্মিত করে ! মানুষ বেঁচে থাকে কেন ! এই সংশয় আমাকে তাড়িত করে।প্রতিটি দেখা থেকে আমি নুতন করে অনুবাদ করে ফেলি আরো নুতন নুতন দেখাকে। জীবনের স্বাদ নিতে থাকি ক্লান্তিহীনভাবেই।

একটা ঝুঁকে পড়া শীতকালের জন্য আমার মায়া ছিল।আমি তো জানিই যে হাটে কমলালেবু বিক্রি হয় সেই হাতে ঢেকিশাক বিক্রি হতে পারেই না । খেলনা বন্দুক দিয়ে আমি তো আর শিকারে যেতে পারি না।শহরে আবার ফিরে আসতে দেখি সেই সব পুরোন যাত্রা।সেখানে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলতে দেখি পার্ট ভুলে যাওয়া নায়ককে।  একইসঙ্গে বাদাম ও খুচরো পয়সা রাখি পকেটে। মেলা থেকে ফিরেই ফুটো করে দেই সমস্ত বেলুন। মৃত্যু আমার প্রতিপক্ষ নয়।স্বজনের জন্য আমার শোক খুব সাময়িক।হিজল একটি গাছের নাম হলেও আমি কিন্তু হিজলের ছায়ার কাছে কখনো যাইনি। ভাঙা সম্পর্ক থেকে তাই গান উড়ে আসে।এভাবেই লাইটার ও মোমবাতির যুগলবন্দী আর আমার হাসিমুখে চাঁদের আলো

১৬.

অনন্তের এক জীবন আমাদের চারপাশে। সেই জীবনের উত্তাপ শোক ও শ্লোকের কি এক বার্তা বুঝি বহন করে আনে!ভোরের পৃথিবীতে কি এক রহস্য জেগে থাকে,আমাকেও জাগিয়ে রাখে!দিনদুনিয়ার টুকরো সব গল্পগুলিকে পল্লবিত হয়ে উঠতে দেখলে আমার সমস্ত শরীর জুড়ে এক প্রবল বর্ষার ঢেউ,হয়তো খুব উঁচু কোন পাহাড় থেকে নেমেই আসছে অন্তহীনকালপর্ব জুড়েই।

এই সব দেখা ও দেখাসমগ্রের অনুসঙ্গে একটা অদ্ভুত পরিসর নির্মিত হয়ে যায়। আমি জন্ম লিখতে শুরু করি।আমি জন্মান্তর লিখতে শুরু করি।আসলে যে যাপনের ঘেরে আমি থাকি সেই জীবন ও সেই জীবনযাপন আমাকে দিয়ে হয়তো লিখিয়ে নেয় কবিতার পর কবিতা।এটাই সত্য।

আমি কবিতা লিখি।আমার সমস্ত দেখা ও দেখানোকে নিজের যাপনের ভেতর টেনে নিয়েই।কবিতা লেখা ছাড়া আমার আর কিছুই তো করবার নেই!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা পাতা সাপ্তাহিক