চা পাতা।। ৫৩




 স  ম্পা  দ  কী  য় 

    তরুণতম কবিদের লেখায় সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি চা পাতা'র এ সপ্তাহের সংখ্যাটি। তরুণ কবি শব্দটি বড্ড আদরের। আশা-ভরসা, ভবিষ্যত সব এরাই। তবু সদ্য লিখতে আসা সবাইকে তরুণ কবি শব্দটি দ্বারা অভিবাদন করা হয়ত উচিত নয়। যে কবি অগ্রজের কথা শুনবে কিন্তু মাথা বিকোবে না, যে কবি বিশেষ কবিতা উৎসবে যোগদানের মোহে এর ওর পেছনে ঘুরঘুর করবে না, যে কবি সত্য বলতে পিছপা হবে না সেই তো তরুণ কবি।   

   লবি শব্দটির ব্যবহার লেখালেখির জগতের বাইরে খুব একটা শোনা যায় না। তরুণ বন্ধুরা লবি হইতে দূরত্ব বজায় রাখুন। সবার সাথেই মিশবেন কিন্তু মিইশ্যা না যাওয়াই ভালো।

   আমাদের অনেক বদনাম আমরা নাকি পড়াশুনা করি না। প্রতিদিন পাঁচ পাতা করে পড়ব । অনেকটা জীবন বাকি আছে, অনেক পড়া হয়ে যাবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়েই এই প্রজন্ম লিখতে এসেছে। চলুন লিখি ব্যকরণ ভেঙে আবার গড়ি।    

      
   

    
   

       

     

  


মেহবুব গায়েন

সারাংশ পাতা


মৃত্যু যদি কেঁদে ওঠে  জন্মের আগে
মুখ টিপে রাখো
শব্দ বীজ ফেটে কলা যোগ -বিয়োগ এলে
সারাংশ পাতা জুড়ে ফুটে ওঠে চাঁদ- বিথী
 গোপন মূলস্রোতে ছুটে আসো রেনেট জল
ঘাম নয়, ভেজা স্বাদ ভেঙে নতুন পৃষ্ঠা...




সাহানুর হক

কেউ ভালো নেই

কেউ ভালো নেই,
এক বাবা,এক ছেলে,এক মা,এক মেয়ে ।

সে বাবার মুখ শুঁকনো,
কুঁচকানো চোখে অলৌকিক আশা
সে ছেলের যৌবন ইতিহাস,
শুধু হতাশায় বেরঙিন স্বপ্ন

সে মায়ের অসুখ করেছে,
একবেলা ঔষধ সেবনের চাহিদায় সে কাঙালিনী
সে মেয়েটির পড়াশোনায় লোকের নজর,
ইচ্ছেগুলোকে রোজ এক এক ফোঁটা বিষ খাইয়ে দেয় সে

কেউ ভালো নেই,
একটি পাড়া,একটি গ্রাম,একটি শহর,একটি দেশ ।

নরম তুলোর গদির বিছানায় বসে
আমি ওদের জন্য কবিতা লিখি,
পাঠক বারে রোজ ।

ওদের জন্য বলতে বলতে কেঁদে ফেলি-- মিথ্যে
অগত্যা ভুলে যাই
কেউ ভালো নেই !




সপ্তর্ষি বনিক

সময়, সাময়িক, প্রেম ও অহনা

বড়ঘড়ির সময় কখনো বড় দেখায় নি
পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় বড় দেখিও নি
কতবার চলে গেছি
দূর থেকে বহুদূরে

বড়ঘড়ির মোড়ে অপেক্ষা করতো,
অহনা।
কখনো বলা হয় নি,
ওকে;
এই ব্যস্ত শহরে সময় বেঁধে-ধরে ভালোবাসতে পারি না।
কিন্তু কি অদ্ভুত
সময়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই
দাঁড়াত ঘড়ির সামনে।

সময় ধরতে পারি নি
তাই
ভালোবাসাও হারিয়ে গেছে
সময়ের সাথে

এখন সাময়িক লাগছে কষ্টগুলো
ভালোবাসা খুঁজে চলছি
সাদা পাতায়...





দুটি কবিতা - খোকন বর্মণ 

এবং পরিস্থিতি

বেড়ে আসা অন্ধকারের দাবদাহ
জ্বলে ওঠা অনাহারী সলতে
যেন আত্মহত্যার শেষ লগ্নে বেঁচে থাকার অন্তিম প্রয়াস।
 আৎকে ওঠা সকাল

পরিস্থিতি কিসমিসের মতো চুপসে গেলে
প্রতিবাদের অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে যায় দেহের জল রক্ত
রাত্রিগুলি উদ্বাস্তু হয়।

স্ব-ইচ্ছায় ওত পেতে বসে থাকা আহত সন্ধ্যা-
এই নিয়েই আমাদের সংক্রামিত যাপন,
আমাদের কাটখোট্টা ব্রহ্মচর্য সন্ধ্যা।


এবং সংক্রমণ

প্রায় দশ বছর ধরে প্রচন্ড জ্বরে ভুগছি, সম্পর্কের মাঝে সাইরেন বেজে চলেছে।
কাশি উঠলে  চলে যাই নির্জনে ,
ফাঁকা মাঠে পড়তে থাকি আমাকে লেখা তোমার প্রথম প্রেমপত্র ।
তেতো মুখ ,দীর্ঘদিনের অরুচি, জিভের ডগায় লেগে থাকা ব্যর্থতা।
জীবনের স্বাদে ভর করে এক ঘোর বর্ষা।
সঙ্গে গলাব্যথাও রয়েছে, মা কে কখনো বুঝতে দেই নি।
করোনা ভাইরাসের    ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে  বলে যেতে চাই সরকারি  চাকরি নেই বলে প্রথম প্রেমিকার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে সুভাষপল্লীর রতন মাস্টারের সঙ্গে।
সাবধান এসমস্ত কথা যেন কেউ না ছড়ায় ।




মানসী বিশ্বাস

অর্ধভেদ্য 

মিতব্যয়ী। নাম লেখানো জাঁতার কল
স্তব্ধ বাক্। চুপ দাঁড়ানো মফঃস্বল
স্বল্পভাষী। মিথ্যে জীবন আঁকড়ে ধর
কারচুপি। কে আপন কে কার পর!

ছাত্রনেতা। তাজা শরীর ঝলসে ওঠে
সংস্কারি। আড়াল থেকে মজা লুটে
চৌদ্দ দফা। আঁকড়ে ধরার ভিত নড়ে,
ভালোবাসা। অর্ধভেদ্য পর্দা পরে!


নিশীথকুমার সেন

নদী থেকে পথ 

পথ হয়ে হারিয়ে গেছি
তাই কিছুদূর গিয়ে এঁকেবেঁকে বইছি দুজনে
আমরা নদী হতে চেয়েছিলাম একদিন
বালুর নরম স্তনে সুর্যাস্তকে ঘুম পাড়াতে ভালোবাসতাম
তুমি স্বাধীনতা চেয়েছো ওড়ার
আমিও উড়তে শিখেছি
বুঝেছি স্বাধীনতা থাকলেও কিছু পিছুটান দরকার পরাধীনতার
স্বাধীনতার অবসর ভেঙে ফিরতে চেয়েছিলাম নদীতে
ততদিনে তুমি পথ হয়ে গেছো
 পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম একবুক নদীতে
তারপর পথে নেমে এসেছি
হাঁটছি নদী ও পথের গতিপথে একা একা




মনোজ সাহা

জীবন এবং আরোকিছু

জীবন ভাঙতে ভাঙতে আজ পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে
মূর্তি গড়ার আজব কোনো খেয়ালে
আমায় যেন কেউ বোলো না 'ভালোবাসি '।

মিশতে মিশতে বালি কাঁকুড়ের মতো এক হলেও
নদীর মতো পেছনের পথটি ভুলেও
আমায় কিন্তু বোলো না তুমি 'বিশ্বাস করি' ।

হয়তো কোনো পাতা ঝরা বনে হয়েছিল পরিচয়
ক্ষয়িত বুকের কাটিয়ে সমস্ত ভয়
বোলো না যেন অনিচ্ছেতেও 'পথ চলব একসাথে' ।

আমার সোনার পাঁজরে জং ধরতে আর কিছু বাকি
শান্তির আড়ালের লোভের কোনো পাখি
বোলো না যেন খড়কুটো বিনা 'বন্দি হতে চাই' ।

শুনতে শুনতে হয়তো সহ্যের বাঁধ ভেঙে হবে ক্ষয়
ভেসে যাব আমি হবে বেদনার জয়
বলব আমি হারিয়ে গেছি 'আমায় ভুলে যাও' ।


মন্তব্যসমূহ

  1. খুব ভালো সম্পাদকীয়।
    কবিতা গুলি যে যার বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
    সত্যিই তোমরা প্রকৃত তরুণ রা আমার খুব আদরের, ভালোবাসা র । ভালো থেকো।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা-পাতা ৯১