চা পাতা।। ৫৪
স ম্পা দ কী য়
মানুষ এখনও অসহায়। বিজ্ঞানের এত জয়যাত্রার মাঝেও মানুষ কোথাও কোথাও থমকে দাঁড়িয়ে পরে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আরো একটা বিষয় আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, একটা মানুষ একটা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ও জগতের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ! একটা বিশাল সংখ্যক মানুষকে একটা নির্দিষ্ট আকারের স্থানে ধরে রাখার যে ব্যবস্থা সেটাই রাষ্ট্র। একজন ব্যক্তির জীবন বিপন্ন হলে রাষ্ট্রব্যবস্থাও যে বিপন্ন হয় তা এখন ভাবতে হচ্ছে। এই বিষয়টি আমরা আর কখনোই তো ভাবি না, রেলস্টেশনে শুধুমাত্র একটা ময়লা চাদর নিয়ে শুয়ে থাকা মানুষকে নাক সিঁটকে পেড়িয়ে গিয়ে রাষ্ট্র নির্মাণ করছি। আইনের বইয়ে সংযোজন চলছে নতুন থেকে নতুনতর অধ্যায়।
শেষ পূর্ণচ্ছেদ
তোমার বইয়ের পাতায় চোখ রাখলে - তুমি পাঠ করে যাও
আমি শুনি আর পৃষ্ঠা হতে থাকি
বর্ণ আর ঘুম মুছে যায়...
জানতে চাও " আর কত মুছবি? "
" মোছা যাচ্ছে? "
মাথাটা ঝিম ঝিম করে
বুঝি সম্পূর্ণ রক্তশূন্য হয়েছি
লিখে যাচ্ছো ...
লেখার ভেতর থেকে আরেকটা লেখার জন্ম দিচ্ছো
শুনি, যে শোনায় মুদ্রা ভাঙে রোজ
কত বই হয় !
তবুও হতে পারিনা তোমার বইয়ের শেষ পূর্ণচ্ছেদ...
অনন্যা দাশগুপ্ত
বসন্ত
দাগ মুছে যাচ্ছে রোজকার
নতুন দাগ জমছে।
বোবাকালা সময়ে মরছে মানুষ,জ্বলছে চিতা।
হাওয়া দিতে দিতে
সমুদ্রে পা ডোবাচ্ছে রূপকথার মেয়ে,
চোরাবালি কী -
সে তা জানে না।
মেরুদন্ডে তীব্র ব্যথা করে
শীতও শেষ হয়ে এল,
যখনই জলের কাছে বসি-
নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে হয়।
শুভঙ্কর পাল
আদরে ক্রিস্টাল ও বাদামি ফড়িং
সারাটা উঠোন জুড়ে ফিকে হয়ে আসে রোদ
চশমার মলাট দেয়া আড্ডা
এখন একটু একটু কুয়াশার ভিড়
পাইন জড়িয়ে রাখে শরীরে পশমী
হেরিটেজ হেরিটেজ টয়ট্রেন
প্রেমিকার হাত ছুঁয়ে থাকা নাবিকজন্মের ইতিহাসের ভিতর
পথবাতি ও কুয়াশার ইশারায়
ভোর
ওই কাঞ্চনজঙ্ঘা জেগে ওঠা
নিয়ত বদলে নেয় রং
শুধু বয়স বেড়ে যাবার দিনেও স্পর্শ একই থেকে যায়
দিন বদলের গান কিম্বা
গানের বদলেও নস্ট্যালজিক
বাদামি ফড়িং বড়ো প্রিয় হয়ে ওঠে
ক্রিস্টাল বরফের চাদরে আদরে
নাদিরা
বিত্তহীন_আলাপ
শুনেছি এখন আর ফুটপাতে ধূলো ওড়ে না আগের মতো
পরিবর্তে থাকে পচা লাশ দগ্ধ প্রানকীট,
ছাইমাখা চিতাদের পাশেও জেগে আছে বোবা ফুসফুস
আরেকবার অক্সিজেনে ভরাবে অন্ধগলি....
এতোদিন হেঁটে গেছি মধ্যবিত্ত পাপেদের ধার ঘেঁষে
হয়েছে পৃথকীকরণ আত্মা ও সীমারেখার,
স্বপ্ন ও স্বাদের ভেতর কত ভাগ আছে জানা নেই ।
আমাদের ছাউনিতে কখনো রোদ্দুর পড়েনি ; পড়বেনা.....
কখনো শ্যাওলা, কখনো বা রক্তের কালো ছোপে দেহভরা
উঁচু মনুমেন্টের রঙ আমার খুবলানো উরুসদৃশ;
চোখে হলদে আলো পড়লে ঢেকে নিই কালো পতাকায়
লক্ষ পোকায় আয়োজন করে চোখের মণির ঠিক নীচেই.....
আমার অতি নিম্ন বুনিয়াদী জীবনের খাপে খোপে ভাঁজে-
বয়ে যায় একটি নদী, তামাটে বা জং ধরা
প্রতিদিনে রাতে মৃতদেহ আসে ; ছাই হয় নদীচরে ।
আগুনে জীবনের গন্ধ ভাসে - আমি স্রোত আঁকি
একদিন মায়েদের মরদেহ আসে , চিতা সাজে
আমি দুধপোড়ার শব্দ পাই ; মায়ের দুধ পুড়ছে....
সৌরদীপ বর্দ্ধন
যেদিন জীবন খুব কাছে
গরাদের বাইরে একফালি আকাশ,
মাঝে মাঝে গাছ গুচ্ছ।
কেউ রাতের নিস্তব্দ প্রহর পাহাড়া দেয়,
বিকেল শেষে নিঃশ্চুপ হয়ে পড়া,
যেন গরাদ গৌন।
আমি ছুটছি জীবন্ত মাঠ বেয়ে,
পায়ের নিচে গাছের ছোপ।
দূরে আকাশ মিলেছে খুব কাছের দিগন্তে
কিন্তু আমি কেন ছুটছি, নাকি পৃথিবী ছুটছে?
পাগলের মত ঘরবাড়ি, ঝোপঝাড়,
ইলেকট্রিক পোস্ট ডিঙিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু কোথায় !
আঁধার ঘনীভূত হতে হতে একসময়
আলোর জন্ম দেয়।
পরাজিত মননে উপরে তাকাই,
আলোতে প্রায় ঝলসে যাওয়া চোখেও ঠিক দেখতে পাই ;
সিগন্যাল ভাঙা সেই গাড়ি জীবন অতিক্রম করে পাড়ি দিচ্ছে অন্য জীবনে,
যেখানে প্রত্যাশা মিশেছে দিগন্তরেখায়, আর ভালবাসা অগ্রিম দাঁড়িয়ে থাকে একা বৃক্ষ হয়ে।
না
হেঁটে যাই , যেমন করে সবাই হেঁটে যায় ।
ক্লান্তি আসে, ইচ্ছে করে মৃত্যুর মতো ঘুমিয়ে পরি ;
তখনি নুন-ভাতের সংসারে জেগে থাকা
প্রেমিকা বলে ওঠে-
সবাই তো যাচ্ছে, তুমিও যাও ।
যাই এক পা , দু'পা করে এগিয়ে
নিশ্চয়তা থেকে অনিশ্চয়তার দিকে।
কখনো দিগন্ত ঢেকে যায় কুয়াশায় ,
কুয়াশা সরিয়ে দেখি সোনালী আলো।
আশাবাদী মনে আবারও জেগে ওঠে-
'' এবারে হবে....''
অথচ হয় না কিছুই ।
যদি হওয়ার গল্প টা থামিয়ে দেই ,
যদি বলি সব পেয়েছি আমার আর কিচ্ছু চাই না;
তাহলে আস্তে আস্তে ভিতরের নদীটা শুকিয়ে যাবে,
মিশে যাবে সমস্ত চিহ্ন ।
হয়তো যতদিন একটা না হওয়ার গল্প থাকে
ঠিক ততদিন মানুষ বাঁচে।
একটা ' না ' এর ভিতর লুকিয়ে থাকে জীবনীশক্তি।
----------------------------------------------
চা পাতা
সাপ্তাহিক ব্লগ জিন * ২য় বর্ষ * সংখ্যা- ৫৪
সম্পাদক - তাপস দাস
email - tapsds00@gmail.com
---------------------------------------------------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন