ধারাবাহিক আত্মজীবনী





১১.

এক হয়ে যাওয়াটা আসলে ম্যাজিকের মত।বুকের ভেতর বল্লম গেঁথে দেয় কতজন।কত কুৎসা বেলুনে ভরে আকাশে উড়িয়ে দেয় কত তথাকথিত স্বজন।যাকে বা যাদের খুব বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরেছিলাম তারা আমাকে কান্না উপহার দেয়।কষ্ট উপহার দেয়।উদ্বেগ উপহার দেয়।সমস্ত কবিতা জীবন কেবল অভিশাপ বহন করেছি আমি।দন্ডিত হয়েছি বারবার।কি আর করার।সমস্ত জীবন কেবল লড়াই আর লড়াই।খুব বুঝি খারাপ একজন মানুষ আমি!কিছুই পারি নি জানি।কেবল ভাঙা হাটের লণ্ঠন হয়ে একটা স্বপ্নের যৌথতায় আশ্রয় চেয়েছিলাম।বিগত এক মাস আমার জীবনে কোন শুশ্রূষা নেই।বাদ্য ও বাজনা নেই।খুব একা আমি।কিন্তু লড়াই জানি।ভাঙা ঘরবাড়ি দ্রুত সারিয়ে নিতেও জানি।সামলে নেব সব আমি।আবার রক্তচাপ স্বাভাবিক হবে আমার।ভাঙা শরীরে গান গাইবে বাংলার শালিক পাখি।আমি আর শৌভিক চলে যাবো ডুয়ার্সের জঙ্গলে।বড় কষ্ট এই জীবনে।এত একা হয়ে গেলাম কেন!

১২.

৫০-এ পা দিয়ে আমি উপহার পেলাম উচ্চ রক্তচাপ।নানারকমের উদ্বেগ আর ফোবিয়া আমাকে ঘিরে রেখেছিল।কাউকে মন খুলে বলতেও পারছিলাম না।নিঃসঙ্গতার ভয়,অসুখবিসুখের ভয়,মৃত্যুচিন্তা,সম্পর্ক ভেঙে যাবার ভয়,একা হয়ে যাবার ভয়।কবিতা লিখতে পারছিলাম না।এর মধ্যে আমার সবচেয়ে কাছের ভাই শৌভিক বনিক পায়ের মালাইচকি ভেঙে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লো।শৌভিকের যন্ত্রনা আর ফুলে যাওয়া হাঁটু আমাকে একটা অসহায়তার ভেতর ঠেলে দিল।সৌভিককে ফোন করি আর ওর কাতরানী শুনি।ভেঙে পড়ি খুব।শৌভিকের সাথে সম্পর্কটা আসলে খুব ভেতর থেকে নির্মিত।অভিমানের।ভালোবাসার।ভরসার জায়গা ও আমার।ওর পায়ে অপারেশন হবে।সেরে উঠুক ঠিকঠাক।প্রায় মাসখানেক নিজের সাথে যুদ্ধ আর লড়াই চললো আমার।আর এই লড়াইয়ে আমি জিতলাম।মেনে নিলাম রক্তচাপ।মেনে নিলাম শারীরিক বয়স।এসব তো বাস্তব।মৃত্যুর আগ অবধি বেঁচে থাকতে হয় আমাদের।জীবনে হতাশার কোন জায়গা নেই।আর কিছু সম্পর্ক তো তৈরি হয় ভাঙবার জন্যই।যে সম্পর্ক টিকবার, যে সম্পর্ক জুড়ে আলোর অপেরা সেসব স্থায়ী হবেই।এসবকে মান্যতা দিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়া।আমার কোনো হতাশা নেই।আমার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই।আমার কোনো শত্রু নেই।আমি কাউকেই শত্রু ভাবি না।আর আমার শত্রু হবার মত যোগ্যতাই কারো নেই।তবে নিন্দুক রয়েছে।ঈর্ষাকাতর মানুষজন রয়েছে।এসব তো থাকবেই।আমি এই লড়াইপর্বে
একা একা চলে গেছি হাটের ভেতর।গ্রামীন মেলায়।সাঁকো পেরিয়ে বিশাল বড় বালুর চরে।কত কত পাখিদের উড়ে যাওয়া।চুপচাপ দাঁড়িয়েছি আঞ্চলীক নদীর পাশে।হাঁসের পালক থেকে ঝরে পড়া জল আমাকে বিনির্মাণের দিকেই এগিয়ে দিয়েছে।লোকগান শুনেছি সুপ্রচুর।ভালো ভালো ফিল্ম দেখেছি।আর আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু অগণন পুস্তকমালা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে বরাবরের মতন।ভালো আছি এই অনেক রোদের পৃথিবীতে।এই সুপারিগাছের পৃথিবীতে।সাঁকো ও শালবনের পৃথিবীতে।এই নাচ ও গানের দিনদুনিয়ায়।এখন কেবল কাজ।নিজের পড়াশোনা।গঞ্জবাজারের ধুলোয় খুব ঘুরে ঘুরে আসা।সব কিছুকে সহজভাবে নেওয়া।নিতে জানা।শরীরের যত্ন নেব।কারণ সুস্থ না থাকলে কাজ করা যায় না।আমি এই জীবনে খুশি।অনেক তো পেয়েছি।আমার যোগ্যতার চেয়েও অতিরিক্ত।খুব সামান্য একজন মানুষ আমি।সবাই ভালো থাকুক।সবার ভালো হোক।আর আমি লিখি-

'কথাবার্তা শুরুর আগে একটু ভুট্টাবাগান ঘুরে
                                                       আসি
বন ও ভোজনের মাঝে বসিয়ে দিই
                                         বিপদসংকেত
এই এলোমেলো ভরদুপুরে
তোমার উড়ন্ত চুলে চিরচেনা পাখি এসে
                                                       বসে
কথাবার্তা শুরুর আগে আমরা
সন্দেহ খুলে রাখি।বাঘনখ খুলে
                                           রাখি'।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা-পাতা ৯১