চা পাতা।। ৪৯




  মেদহীন কবিতা। আজকাল খুব শোনা যায় এই মেদহীন বা  নির্মেদ কবিতা শব্দটা। বেশি কথা, অপ্রয়োজনীয় কথা কবিতায় কাম্য নয়। আবার নির্মেদ করতে করতে হাড়গোড় বের করে ফেললেও ভালো লাগে না। ধরুন কবিতাটি যদি আপনার অবসরের বারান্দা হয় তবে সেখানে সামান্য অতিকথন যদি লতানো ফুলগাছের মতো গ্রিল বেয়ে উঠতে চায় উঠুক না, অসুবিধা কোথায়! খুব বেশি চালাকি করতে গিয়ে আমরা কবিতাকে হয়তো ধাধা বানিয়ে ফেলি।
কবিতা কিন্তু ধাধা নয়। অহেতুক ঘুরিয়ে বলার বিষয়ও নয়। কবিতা হয়ত নিজেই নিজের ঈশ্বর,  বুকের ভেতরে আত্মার মতোই অজ্ঞাত এক বস্তু।




অঞ্জন দাস -এর দুটি কবিতা

প্রেমিকার ঘাম

রোদ ভাঙা কাঁচ প্রতিরন্ধ্র জল তুলে নিলে
তোমাকে শ্রাবণী লিখি ক্যাকটাস কবিতা
সহজে সমাপ্ত নয় গর্ভস্থ পানি লালিত উপন্যাস
জানি  সরলতা প্রান্ত  আঠালো বোঁটা অংশটুকু
গলা গড়িয়ে  গানের ভাষারা বিন্দু
ক্রমশঃজমাটী ভ্রমণ বিছিয়ে পড়ে
আঁশপাতলা ছায়া ভেজে    
  বৈচিত্র্যে তুলিশিল্পীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ ঘাম
রোদ ভাঙ্গা কাঁচ প্রতিরন্ধ্র জল তুলে নিলে।
গ্রীষ্মেই ফিরবো আবার সরলা স্রোতের গ্রামে
সমস্ত উঁচুর পাশদিয়ে গড়িয়ে পড়বো খাদে
আবর্ত ঘুর্নির কেন্দ্রীয় টানে অদৃশ্য হবো
মন্থন অমরত্ব ঢেলে দেবো  পাইনের টবে
রোদ ভাঙ্গা কাঁচ প্রতিরন্ধ্র জল তুলে নিলে
বাগানের ফুলে আলাদা কস্টিউম
কিনারায় সমুদ্র চঞ্চল ক্যামেরা প্রেমিকার ঘাম।


ডিজিটাল প্যাসেঞ্জার

ভারী হলে ছেড়ে যায় হাত
ডিজিটাল প্যাসেঞ্জার ওঠে ভীড়বাসে
আলাদা গন্তব্যে নামে এক একটি পারফিউম
প্রতি মূল্যে জার্নি আলাদা
আসলে চতুর্থ দিনের মিমাংসিত ম্যাচ
আর একবার মুখোমুখি হতে চায়
পুরোনো কাসুন্দি মাখো মাসলা মুড়িরা
গুডলেন্থ কখনো সখনো ছক্কা হতে পারে
সাইকেলে উল্কাচালক বেলমারো জানলায়
ভারী হলো ছেড়ে গেলো হাত
রেখা পথ চলে আসে হাতি
দুরত্ব বাড়ে তবু দৈঘ্য বাড়েনা




পিয়াংকি'র কবিতা

চালচরিত্র

১. ধর্ম

একটা জলপূর্ণ পাথরবাটি
স্বচ্ছ জল যদি মাধ্যম হয়...
মৃত্যু থেকে জীবন পর্যন্ত একটা প্রতিহত সরলরেখা
খুব সন্তর্পণে চোখ ফেলে তুমিও চাইলে ভ্রমণ করে আসতে পারো বিনাখরচে ।

২. জীবন

ফিরতি পথে হাঁটা হয়নি আমার
ত্রয়োদশীর চাঁদে সমাজ যেদিন ছুঁড়ে মেরেছিল সোনার পাথরবাটি ,
আমি সেদিনই ত্যাগ করেছিলাম চিরাচরিত কৌলিন্য ।
আরো দু'পা এগিয়ে গিয়েছিলাম জাহান্নামের বাসভূমিতে ।
কলঙ্ক মাখার জন্য আমি  আবর্জনা ঘেঁটেছি বারবার ,
কলঙ্কের সাথে জনপ্রিয়তা সমানুপাতিক সম্পর্কযুক্ত ।

৩. সভ্যতা

দৃশ্যপটের মাঝে একটা দশইঞ্চির দেওয়াল
বিপরীতমুখী দুটো নিরাকার প্রতিকৃতি সমঝোতায় যুক্ত
অনন্তকাল ধরে আকৃতি সাজিয়ে আমি পেশ করছি ভোগ্য বস্তু
প্রতিবিম্বিত হচ্ছে আলো আর অন্ধকার
চিন্তাভাবনা একটা পর্যায়ে গিয়ে স্বীকার করেছে তাদের অক্ষমতা !
আমার সামনে একথালা ভাত আগলে বসে আছেন মা
শেখাচ্ছেন থালার ভেতর নাকি উঁকি দিলে আমি দেখতে পাব আমার দেশকে !




বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী'র কবিতা

শব্দ আর কবিতা

মানুষের পাশাপাশি শব্দেরা হেঁটে যায়,
আমি দেখেছি কাল কবিতা লেখার ফাঁকে।
শব্দেরা সমান্তরাল,তির্যকভাবে আমাকে
সাংকেতিক বিষাদের সংজ্ঞা শুনিয়ে যায়-
সুন্দরের মাঝে পর্যাপ্ত খুতের বিশ্লেষক হয়ে
এই শব্দদের চলাফেরা আমাকে জাগিয়ে রাখে।
রাত-ভোরের ঠিকঠিকানা আমার সব গুলিয়ে যায়,
শব্দ চাই,শুধু শব্দ;
ব্যঞ্জনা,উপহাস,পরিহাস,ক্লেশ,মৃত্যু,কেচ্ছা,বিচ্ছেদ,রিরংসা,ভালোবাসা এসবের দায়িত্ব থাকা শব্দকর্তৃপক্ষের নির্দেশ - "রাত জাগো,রাত, রোজ দশ-বারোটা কবিতা চাই"।




সৌরভি রায়ের কবিতা
টুকরো

১.
এত তাড়া কিসের!
ভালো আছি বললেই তো গল্পটা শেষ।
মিছিমিছি চাইব কেন তুমি চলে যাও।
কতদিন ধরে চাইছি সময়টাকে, তোমাকে।

২.
পাশে তুমি থাকবে, পাশাপাশি হেঁটে যাব পুরানো কলকাতা।
স্বপ্নে দেখেছি এইসব দিনগুলো।

৩.
না, শোনো বলছি দাঁড়াও।
সে এসেছিল কিন্তু।
ট্রেন রাত সাড়ে এগারোটায়, শিয়ালদা স্টেশনে একা দাঁড়িয়ে আছি, মনখারাপে।
গোলাপফুল আর একখানা প্রবন্ধের বই নিয়ে।
এমনি আধপাগল মানুষ সে।
থেকেছিল কিছুক্ষণ।
হা করে শুনেছি তার কথাগুলো।

৪.
আবার না জানি কতদিন পর দেখা হবে।
বছর গুলো এত তাড়াতাড়ি চলে যায়, দিনগুলো কেন যায় না?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা পাতা সাপ্তাহিক