চা পাতা।। সংখ্যা - ৪৫





স ম্পা দ কী য়  

 এখন সারামাঠে হেমন্ত। রোদের রঙের সাথে পাকাধান রঙের আশ্চর্য বন্ধুত্ব। বিচিত্র পোকারা নেচে বেড়াচ্ছে ধানের ওপর।  অপূর্ব এক গন্ধ, এক মায়ার মধ্যে চাষিরা কাস্তে হাতে মাঠে যাচ্ছে। তাদের স্ত্রীরা স্টিলের গামলায় আলুভর্তা আর ভাত নিয়ে গামছায় বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন খাওয়াতে, আলে বসে খাচ্ছেন চাষি। ধান ও রোদের আলোয় প্রিয়তমা কিভাবে লক্ষ্মী হয়ে উঠছে লক্ষ্য করছে খেতে খেতে। ঘাম মুছে দিচ্ছে স্ত্রী। যেন ক্লান্তির পাশে জবাফুল, ঘামের সাথে প্রেম। উদ্দ্যেশ্য জগতের কল্যানসাধন।
  

প্রকৃতজন

পহেলী দে

কবি
গেল আশ্বিনে আপনার অতিথি হবার
তুমুল ইচ্ছা হয়েছিল মনে।
আপনাদের ফড়িং রঙে সাজানো
নানান ঢঙের কাব্যাসরে
নাগরিক কবিদের উপচে পড়বার উল্লাস দেখে,
আমারও বাসনা জেগেছিল
শরতের নীলে মেঘের মত গা ভাসাতে,
কাশফুলের ঝোপে লুকিয়ে
প্রেমিকা মনে আশঙ্কা হতে।

মঞ্চের জমকালো আলোয়, উজ্জ্বল চোখ দেখে
বিশ্বাস করুন, আমি আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।
অবশ্য হাত পা কিছুই ভাঙেনি।
বাতিঘরের একজন বইকর্মী কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনন্তবার অনুভব করেছে আপনার লাবণ্য।
একান্তের নির্জনতা বিনিময় করেছে
ক্যান্ডেল লাইটের রোমাঞ্চিত অন্ধকারে বসে।

আমার বামহাত ও আপনার ডানহাতের মাখামাখিতে ঝড় উঠেছে পৃথিবীর ফুসফুসে
ওষ্ঠের চাতুর্যে ছাই হয়ে গেছে
আমাজনের পর আমাজন।

আমি স্বপ্নে আপনার শরীর মোড়ানো
বুটিক কামিজ খুলে নিয়ে
সস্তা তাঁতে জড়িয়ে দেখেছিলাম বুকের গম্বুজ।
বিশ্বাস করুন অদ্ভুত আদিমতায় তল না পাওয়া সাঁতারুর মত তলিয়ে গেছি আমি,
                            অশরীরী কবিতার গভীরে।
এ মধ্যবয়সেও আপনার শরীরী শৈলী এত চারুময় যে
একবার নজরে পড়ে গেলে
কোনো দৃষ্টি নিজেকে তুলে আনতে পারবে না
ঢেউখেলানো নিতম্ব হতে,
তলপেটের অতল হতে,
সামুদ্রিক উতলা বাতাসের মত ছিটকে পড়েছিলাম তাচ্ছিল্যের করতলে।

চমৎকার কাছে টেনে নেবার কৌশল আপনার,
আমি তো গলে যেতে চেয়েছিলাম
মূর্তিময় দেবীর পায়ে গলে যাওয়া মোমের মত,
পুড়ে যেতে চেয়েছিলাম সুগন্ধ ধূপের সঙ্গে।

কিন্তু আপনি চতুর কংক্রিটবাসিনী
সভ্যতার দোহাই দিয়ে
বিমুখ করেছেন কাঙাল হৃদয়ের
মুষ্টিভিক্ষে চাওয়া আনন্দকে।

তবু কবিতার মক্ষিরানী,
অজপাড়াগাঁয়ের অনাদরে বেড়ে ওঠা
শুশ্রুষাহীন এই আমিই আপনার প্রকৃত প্রেমিক।


------------------------------


মধ্যবিত্ত জীবনবৃত্তান্ত

 মান্টি অধিকারী দত্ত

         
কখনও ব্যঞ্জনে, কখনও যুক্তাক্ষরে ,

তোমায় খুঁজি নুন পান্তা মাখা     বাক্যের অভ্যন্তরে;

  নিতান্ত ছাপোষা মধ্যবিত্ত,   
  বিশেষণে তুমি আর তোমার বৃত্ত ,

বিভক্তির ভাঁজে ভাঁজে
    পরিধি  রক্তাক্ত ,
       
    সহস্র সেলাই-এ মোড়া
     বৃত্তির জীবনবৃত্তান্ত...

----------------------------


আজন্ম লালায়িত যা 

বিকাশ দাস (বিল্টু )


গরুর বাটের সাথে বদনার যেরকম সম্পর্ক
একটা ছন্দ, তাল.....
                          আজন্ম লালায়িত

চেনা ছন্দের বেসামাল তালে মনে পড়ে স্মৃতিকথা
                    উঁকি দেয় শৈশব ; মায়ের আতুরঘর
ভেসে উঠে ফেনা ; তবুও বদনার  সাথে সম্পর্ক ছেদ হওয়ার কথা ভাবলেই
                         হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে মন

পরানদের বাড়িতে ক্যামনে তিনদিনের  বাছুরটা তিড়িং বিড়িং করে ছোটে
               অবাক চোখে নেশা লাগে, দু ফোঁটা জল আসে

কিংবা;-
দুলু দাদুর পানানোর  সময়ে  বুধু নামের বাছুরটির  হাত সরিয়ে দুধ খাওয়ার অদম্য লড়াই
                          ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়

          অনেক কথাই  মনে পড়ে, মনে পড়ে চেনা ছন্দ,হাম্বা রব 
            মায়ের  লেহন
ডুকরে কেঁদে উঠে মন,
                   ভেসে আছে কত ফেনা !

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা-পাতা ৯১