দোতারা।। দ্বাদশ পর্ব।।




'ও মুই হাট ঘুরুয়া মানসি
ও মুই তিস্তাদ্যাশের মানসি'
কয়েক বছর আগে জল্পেশের ভরা হাটের পাশের খুলিতে একজন প্রায় অন্ধ সারিন্দাবাদকের বাজনা শুনে চমকে উঠেছিলাম।নিজের মনে আর একাগ্রতার তিনি বাজিয়ে চলছিলেন।আর তুলে আনছিলেন উত্তর জনপদের কত কত লোকগান।তিনি যখন সারিন্দা বাজাতে বাজাতে গাইছিলেন-
'বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে
মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে
কুনদিন আসিবেন বন্ধু
কয়া যাও কয়া যাও রে'
কিংবা-
'ও তুই কিসত গোসা হলু রে
নালবাজারের চেংড়া বন্ধু রে'
অথবা-
'বরণী ধানের ভাজিলুঙ খই
প্রানের বন্ধু মোর আসিলেন কই'
তাকে ঘিরে ছোটখাটো একটা  ভিড়।একটা স্তব্ধতা।দূরাগত তিস্তার হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে উত্তরের ভুমিলগ্ন মানুষের সম্পদ লোকগান।
এই শিল্পীর নাম পোয়াতু বর্মন।ময়নাগুড়ির এক প্রান্তিক জনপদে বসবাস তার।এক হাট থেকে ছুটে বেড়ান আরো আরো হাটে।লোকগান নিয়ে।মানুষ মগ্ন হয়ে শোনেন সেই সব গান।হয়তো আশ্রয় খোঁজেন।
পোয়াতু বর্মন গান শিখেছেন তার ঠাকুরদাদা ও বাবার কাছে।চেংড়া বয়সে পালাগানের দলে দোতরা বাজিয়ে নাচতেন।লোকগানের নেশাই তাকে লোকগানের বৃত্তে ঠেলে দিয়েছে।
কঠিন অসুখ তার আশি শতাংশ দৃষ্টি কেড়ে নিলেও জেদ আর ভালোবাসা তাকে থামাতে পারে নি।গানকেই জীবিকা করে নিয়েছেন তিনি।মাটির মানুষের খাঁটি সব লোকগান।
বড় কোন শিল্পী নন তিনি।কিন্তু পোয়াতুরাই কিন্তু লোকগান সংরক্ষণ-এর প্রকৃত কারিগর।
লোকজীবনের আয়না।
প্রনাম,পোয়াতু বর্মন আপনাকে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা পাতা সাপ্তাহিক