চা পাতা ✒ শারদীয়া সংখ্যা ✒ মহালয়া ২০১৯



         

স  ম্পা  দ  কী  য়

ঈশ্বরকে যেখানে রাখার কথা সেখানে না রেখে শুধু বড় বড় প্যান্ডেল বানাচ্ছি। বিচিত্র আলো দিয়ে সাজিয়ে তুলছি জগৎকে। অথচ যেখানে আলো জ্বালবার কথা  ছিল অন্ধকার থেকে গেছে সারাবছর।

সাধনার একটা স্তরে এলে নাকি পূজার বাহ্যিক দিকগুলোর কোন প্রয়োজনই থাকে না, তখন পূজা হয়ে ওঠে মানসিক বিষয়। সাধক চেতনার এমন একটা স্তরে পৌঁছে যান যে তিনি ধ্যানযোগেই ঈশ্বরকে ভোগ নিবেদন করতে পারেন। তিনি ধ্যানযোগেই পেয়ে যান ফুল, বেলপাতা ও নীলপদ্মের সন্ধান।

অবশ্যই উৎসব আবশ্যিক।  বাঙালী জাতি উৎসব প্রিয় জাতি। প্রাণের উৎসবে প্রিয়জনের মিলনের জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকি আমরা। ঢাকের বোল,  কাশফুলের সৌন্দর্য আমাদের স্বর্গসুখ এনে দেয়। এই সুখ তো একটি দিনমজুরের ছেলেও পেতে চায়।  পূজা এলেই সে তার বাবার মুখের দিকে তাকালে শরতের আকাশে অন্ধকার দেখে। একটা সস্তা জামা কত সুক্ষভাবে দরদাম করতে থাকেন বাবা।  প্রতিবছর নতুন জামা অনেকেরই হয় না। একটা বাচ্চার সেই মনের অবস্থাটা যদি একটু ভাবেন।  ক্লাবে ক্লাবে সরকার টাকা বিলোচ্ছেন, যদি গ্রামে চাষাভুষো মানুষের বাচ্চাদের জামা কিনে দিতেন, তবে কি হত না! শিবের মাথা দুধ ঢালা আর জল ঢালা নিয়ে তো অনেক ভেবেছেন।  এবার কি এভাবে ভাববেন। 

  চা পাতা পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে শুভ শারদীয়া।  ভালো থাকুন সুন্দর থাকুন। 


  * *ক*   *বি*   *তা* *



*উত্তম চৌধুরীর কবিতা*


এক দুই তিন

এক: তোমার রুক্ষ দ্বার বোঝা গেছে
         আমি তাই রৌদ্রের কাছে
         ধৈর্য ভিক্ষে করি ,
         একমাত্র সেই পারে
         আমাকে ফেরাতে অক্ষত।

দুই: শুধু কি আমার দোষে
       জলরং মসিলিপ্ত হয়!
       আরও কিছু রহস্যময়
       চোখ থাকে, হাত থাকে
       এবং হৃদয়।

তিন: এই দ্যাখো ফিরে যাচ্ছি,
         হাওয়া যাচ্ছে,
         সমস্ত আকাশ যাচ্ছে অতি দ্রুত
         আমাকে আর আটকাবে কে!


* সুবীর সরকারের কবিতা*

কলাবাগানে মার্কেজ

কলাবাগিচায় মার্কেজ,হাতে হাভানা চুরুট
হেমন্তের রোদ মাখছে  পল গগার ডায়েরি
ওয়ারহীন বালিশ ও নীল মশারীর নিচে দিন
                                                      কাটে
দু'ধারে পতঙ্গের বন,পাখিরাও ডানা মেলে
                                                     ওড়ে
কতকিছু ঘটে চলে।ঘটনাক্রমের সাথে লীন
                                                হয়ে থাকি
চূড়ান্ত প্রেমিক হবো
ঠোঁটে ঠোঁটে শিস বাজবে
ফাঁকা মাঠে গড়িয়ে যাবে কত শত
                                       মার্বেল
ড্রামবাদক পিঠ ঠেকে নামিয়ে রাখছেন
                                                  ড্রাম
পেয়ালা থেকে চলকে যাওয়া চা
স্বপ্নে বারবার দেখি বেড়ালের থাবা
আর গোলকিপারহীন গোলপোষ্ট
কলাবাগানে মার্কেজ,হাতে হাভানা
                                        চুরুট




*মলয় পাহাড়ির কবিতা*

বন্দর বাওড়া   

আদুর বাগদি হাসলে কিছুটা অন্ধকার চলকে পড়ে যায়
গায়ের যে অংশে পড়ে, পুড়ে যায়। 
আমি নৌকায় উঠে বসি, বুকে শীত ,জল গভীরে ডাকলে চোখে আর দৃষ্টি থাকে না। এ সময় মনে হয়, কারু কাছে টাকা পয়সা কিছু ঋন থেকে গেল কী! 

আদুর বৈঠা ছেড়ে পাটার উপর এসে বসল। নৌকো তখন মুক্ত ও ভীরু। 
বালির শরীরে জ্যান্ত  রূপাপাটিয়া মাছ, বাসি আলকাতরা মাখা দোকানের ঝাঁপ যেন তার চুল, বাহুদুটি ইউক্যালিপটসের ডাল, মসৃণ কাদবালি মাখা। ব্লাউজ নেই, বুকের উপর শ্যাওলা রংয়ের শাড়ি আঁটো , ভিতরে দুটো বুনো ট্যাংরা ছটকাচ্ছে ।

কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস বাগদি বুড়ি? 

তীব্র কাঁটা বিঁধেছিল পিঠে, আচম্বিত ধাক্কায় পাটাতনে ফেলে দুপায়ের মাঝে উদ্ভ্রান্ত ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠল তার মুখ...



*সুভান -এর কবিতা*

দূরত্ব কোনো উপশম নয়


কথাশূন্যতা কোনো উপশম নয়...

অথবা নিজেকে আলোয় চুবিয়ে রেখে 
খুশি খুশি খুশি থাকার অভিনয়... 

ঘড়ির দিকে যে মৃত্যু আটকে আছে
প্রেম আজও ফিরে যেতে চায় তার কাছে।

দূরত্ব কোনো উপশম নয়...

চোখ বন্ধ করলেই মুখে হাত রাখা যায়,

বুকে টেনে আনা যায় পুনরায়।



*সুমন মল্লিকের কবিতা*

রোহিণী 


গোটা পাহাড়জুড়ে মন ভালো করা রংরূপ
শান্ত নরম সহজ জীবন এখানে
এখানে মানুষের মুখে হাসি লেগে থাকে
চা-বাগানের মাঝে ঈশ্বর মেঘের আড়ালে হাসেন
লাজুক মেয়ের পাহাড়িয়া গানে কী অদ্ভুত মাদকতা
ক্রমশ মনে হয় স্বর্গ তো এখানেই
এখানেই বাকি জীবনটুকু কাটালে সৃজন-পূজারী হবো আমি


পাহাড়ের কোলে মেঘের ভিড় –
কিছুটা স্পর্শ আমিও পেলাম... এ যেন এক
পুনর্জন্মের অন্তহীন অলৌকিক আলিঙ্গন
বৃষ্টিও অপরূপা এখানে, দেখলেই জীবন সার্থক
চা আর মমো খেতে খেতে সমস্ত বিষাদ বেদনা হারিয়ে যায়


আকাবাঁকা রাস্তা ধরে সাইকেলে নেমে আসে
স্কুলের ছেলে-মেয়েরা  -- কী মিষ্টি, কী নিষ্পাপ
আরেকটু এগোতেই ছোট্ট পাহাড়ি ঝোরা
কুলকুল করে নেমে যাচ্ছে নীচে
যে বৃদ্ধটি কাঠ কাটছে অবিরাম, তার মুখেও কী অদ্ভুত প্রশান্তি
তার বাসায় বিদ্যুৎ নেই , কিন্তু জীবনের আলো আছে ভরপুর


কোন দৈবযোগ ছাড়া কীভাবে সম্ভব এই ফুলের বাগান
চোখ বুজে ঘ্রাণ নিতে নিতে কানে ভেসে এলো
অজানা পাখির কুহুতান
পাহাড়ের ধারে যেতেই
আহা ! নীচে নদী বয়ে চলেছে রূপসী রমণীর মতো


সূর্য ঢলে পড়তেই রেশম রেশম আলো
জড়িয়ে ধরলো আমাকে
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গোধূলির সমুদ্রে দেখি
সারি সারি নেমে আসছে নেশাপরবের বলাকা –
তাদের ডানায় এক এক করে বেঁধে দিলাম
শূন্যতা, ব্যর্থতা, অভিমান...
ক্রমশ হালকা লাগছে নিজেকে
হঠাৎ দেখি, আমি শূন্যে ভাসছি আর আমাকে ছুঁতে চাইছে পৃথিবী
পারছে না


* মানিক সাহার কবিতা* 

নিজের বলে যেটুকু


প্রত্যেকের একটি নিজস্ব জানলা প্রয়োজন
যার যত্নে আলো ও বাতাস উদ্বেল হয়ে ওঠে 

প্রত্যেকের একটি নিজস্ব গাছ প্রয়োজন
যার ফুল ও ফলে দেবতারও অধিকার নেই

এখানে অনন্ত ঘর-বাড়ি আকাশ ও মেঘ মুছে দেয়
এখানে জানলাগুলি মাটি ও আকাশ ফুঁড়ে ক্রমবর্ধমান

তবু
প্রতিটি জানলায় বাঁধা অন্য কারো মুখ
তাতে অন্য কারো হাসি ঝুলে থাকে

এখানে অরণ্যে বহু গাছ -- ফুল ও ফলে বাঁধাবাঁধি

প্রতিটি অরণ্য তবু অন্য কারো
প্রতিটি গাছ অপরের...


*পাপড়ি গুহ নিয়োগির কবিতা*

সড়ক
  
বুঝতে পারি বয়স বাড়ছে
মুঠো খুলে চলে যাচ্ছে সব, শিমুল তুলোর মতো

ঘুমোতে পারি না
কেঁদে ওঠে গোপন কান্নায় বিছানা বালিশ

কারা গাছ কাটে জাতীয় সড়কে

দখল হয়ে যাচ্ছে সাড়ে তিন হাত মাটি

পাতা ধুয়ে যাচ্ছে

মাঝে মাঝে ভুলে যাই মৃত পোকাদের

রাস্তা কামড়ে পড়ে থাকে ক্ষুধার্ত কুকুর

কান্না আঁকতে আঁকতে পাথর এঁকে ফেলি


*মৌসুমী চৌধুরীর কবিতা*

নিক্কন

 
মুঠো খুলতেই ছড়িয়ে পড়ে
টুকরো টুকরো যাপনচিত্র
---- নিয়ন রেখাচিত্রে ওঠা-নামা।
তোমায় ঘিরে নেমে আসে আকাশটা
গলার কাছে পাকিয়ে ওঠে মন-খারাপী শ্বাস।

বাসের জানালায় স্লেটরঙা সন্ধ্যে
পশলা পশলা ফোঁটায়
জেব্রা-ক্রসিং এ তুমুল নিক্কন।

রেড-সিগন্যলে লুকিয়ে রাখি
অনাহার-আত্মহত্যা-নোনাজল।

উত্তপ্ত মঞ্চে মঞ্চে বাবুই শিল্প,
 ইন্ডিয়া ডিজিট্যাল হয়....


*নীলাদ্রি দেবের কবিতা*

মধ্য শরতের কবিতা

কেউ ডেকে দেখাল
  কীভাবে সবার কথা থেকে উঠে আসে সিদ্ধান্ত
আমি জানলাম
বললাম, তোমাদের এ সিদ্ধান্তের সাথে আছি
             তোমাদের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে
এরপর
কোন এসএমএস এলো, কি এলো না... মনে নেই
বললাম
না, আরেকটু ভাবলাম শান্ত মাথায়
ঘন ঘন চা ও সিগারেট চলল, বাটার স্যান্ডউইচ
এবার বললাম,
  এ সিদ্ধান্ত একটি ফ্যাসিস্ট মনোভাবের পরিচয় দেয়
কেউ মেনে নিল
কেউ কেউ অস্বীকার করল একটি স্বরকে
তাতে কী?
ছিঁড়ে ছিঁড়ে গুনতে থাকলাম বাসের টিকিট
এই বাসটি আমাকে এদিকে নিয়ে না এলে
                                যে পথে নিয়ে যেত
এখন সেখানে দাঁড়িয়ে
কেউ জানাচ্ছে না কোনো সিদ্ধান্ত
দু-একটা পেপার, পোর্টালে ভাষা-কাটা ভাসা ভাসা কথা
ঘন ঘন চা-সিগারেটের পর জানলাম
    সিদ্ধান্ত লিখতে বলেনি মাস্টারমশাই
    আদেশ লিখে লালকালিতে গোল করে দিয়েছে
কিন্তু যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি
আমাকে মাঝে রেখে দুপাশে দুটো মঞ্চ
বাকি দুদিকে মুখোমুখি শাসক, বিরোধীর রান্নাঘর
মঞ্চে গদি ও গামছা
ভেসে যাচ্ছে মধ্য শরতের মেঘ



*হিয়া- র কবিতা* 

সুইসাইডাল পয়েণ্ট


অফিসের শহুরে সিঁড়িতে বসে আঁকছি
                             সুইসাইডাল পয়েণ্ট।।

ক্রেয়নগুলো সিডাকসন নামক গালি শুনেছে
গোটা  একটা রাত,ক্যামেরার মতো দেখতে কফিমাগ ভর্তি কফি , ছবি পাঠিয়েছে অন্য কোনজন।
'খেয়েছ , জল খেয়েছ ' এসব শুধায়
সেই জন যার বহু আগেই এসব বলার কথা , বলেনা সে যার থেকে শুনতে চাই এখন আপাতত।

গলার ভেতর ঠেসেঠুসে আলো ভরছি , যাতে চৌকো শূন্যতা নামক বমিটা না বেড়িয়ে আসে।
নার্ভপেন বাড়ছে , আরো আরো বন্ধু হয়ে উঠছি প্রেমিকের।থৈ থৈ ক্ষতগুলোয় ভনভন করে উড়ছে ধুত্তোর বাঞ্চোত।আমি কিছুই বোঝাতে চাইছি না।

সবাই আলো দেখছে , আলো।বৃদ্ধির পেছনে থাকা যন্ত্রণাটা দেখছে না।আমি একা নই , আমি প্রথম নই বলেই কিছুই বোঝাতে চাইছি না।জল খাও।

চিবোতে চিবোতে একশো দুই পাউডারের কৌটো খেয়ে ফেলে ভেতরে জারি করেছি গুঁড়ো গুঁড়ো কার্ফিউ।নিজেকে দূর থেকে দেখতে দেখতে চিনে ফেলছি তোমার লুকিয়ে রাখা ল্যাংটো বান্ধবীকে।
প্রাক্তন বরের সাথে থাকা অঁ ব্রা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি তিনতলার জানালা দিয়ে।ওদের ঢ্যামনামি যুগ যুগ জিও , আমাকে অন্তত মুক্তি দিক।

পরাকাষ্ঠার প্রাচীন পরাশব্দে একটু আগে ব্ল্যাকআউট হয়ে যাওয়া আমি অফিসের সিঁড়িতে বসে মনে মনে বাঞ্চোতদের হিসেব কষি ,রাশি রাশি
অফিসের শহুরে সিঁড়িতে বসে আঁকছি...

  
*স্মৃতিজিৎ -এর কবিতা *

মমি 

সব বিচ্ছেদই বিগত সম্পর্ককে চিনতে শেখায় 
দ্বিতীয় শ্রেণি প্রথম শ্রেণিকে
তৃতীয় শ্রেণি দ্বিতীয় শ্রেণিকে

বোবা সম্পর্কগুলো মুখ খোলে তারপর
তার মৌন কথকতায় 
কিছু সময় পাথরের মত শান্ত হয়ে যায়
কিছু পাথর গলতে শুরু করে

প্রাক্তন অশ্রুর আবেগে এভাবেই 
ঊষর বুক বিগলিত হয়
নতুন সম্পর্কের ডালে এসে বসে অন্য বুলবুলি 
তবু প্রাক্তনেরা মমি হয়ে শুয়ে থাকে
আমৃত্যু ধূসর পিরামিডে


*মীনাক্ষী  মুখোপাধ্যায় -এর কবিতা* 

প্রজাপতি না কি গঙ্গাফড়িং  হবে 


গলা সূর্য  শুষে নিয়েছে কোল ঘুম 
বিরতির পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে 
ঝুলিয়ে  দিয়েছে - ঝুলন্ত চিবুক,ভাঙা চোয়াল 
' জাতি - উপজাতির হাঁটা পথ  এক '
উপহাস খুঁটে খাওয়া আখড়ার জীবাশ্ম 
 অঙ্ক  কষে  শ্যাওলা পড়া তকমায় 
  কাগজে ঘষা বলহীন রিফিল কলম
রঙিন  ঘুড়ি উড়িয়ে  কফিন বন্দী  হাওয়ায়
দেখে প্রজাপতি না কি গঙ্গাফড়িং  হবে  !



*মনিমা মজুমদারের কবিতা* 


বন্ধ্যা পৃথিবী

ভীষণ রকম অসুখ থেকে বের হয়ে
আমরা এক এক করে বাকল ছড়াই
পুঁতিগন্ধময় নালার কাছে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করি দ্বিতীয় জন্মের
দোহাই ঈশ্বর
তোমার বাড়ির দরজা
আমরা পেছনে ফেলে এসেছি
এখন তুমিও পারবে না
আমাদের সন্তানবতী করতে


*নাদিরা-র কবিতা*

অশনি আশা

খাদে তলিয়ে যায় মরন
গর্ভবতী পাহাড়ের কন্দরে....
আজীবন লড়েছি জমাট রক্তের সাথে
ছিল নষ্ট লিভার ও স্তিমিত আশা,
পচন ধরেছে স্বপ্নময় আশ্বাসে ...
ক্ষতবিক্ষত হয় আধো ভবিতব্য   ।
গলে পড়ে একটু একটু পচা রস
আমাদের শারদীয়ার মেঘপুঞ্জ,
থেকে থেকে অশনি সংকেত দিয়েছে
দিগন্ত কালো হয় ; ঝড়ের পূর্বাভাস  ।

পাপের ঝাঁঝরির প্রবল সেচনেই
পৃথক করেছি শ্বেত কণিকাকে  ,
বহুদিন পর স্নায়ু পেল শ্বাস বায়ু
আমরা ফের নিবিড়ে বিপ্লব বাঁধাব  ;
উষ্ণতায় থকথকে লোহিত দলের মাঝে
জানি বিপদে স্তিমিত এসময়  ......
তবুও, একটি সোনালী সন্ধ্যা রইলো   ।।


*পৌষালী বিশ্বাসের কবিতা*


মননের বিন্যাস
      
শেষের লাইনের অক্ষরের নির্যাসে
সজীব হলো ঝরে যাওয়া পত্রবাহার ।।

ট্রামলাইনে হেঁটে যাওয়া,
গঙ্গার ধারে সাঁঝের বেলায় স্বপ্নের আদানপ্রদান।।

ইন্টারভিউ বোর্ডে হতাশার সাইনবোর্ড,
হাল্কা পকেটের রেশ__মুড়ি বাদামেই ভরাপেট।।

খুঁজতে চলা একটু সুখের ঠিকানা,
অসীম চাওয়ায় হাঁপিয়ে ওঠা,
সবার পিছনে পরে থাকা,
শুন্য ঝুলি নিয়ে ছাদের কার্নিশে।।

সাদামাটা ছাপোষায় বয়ে যাওয়া,
বিকেলের স্বপ্ন থাকে কবিতার পাতায়।।

ইচ্ছেগুলো বাক্সবন্দী ,
মাসের শেষে হিসেব লেখা।।
সুখী সুখী মুখোশে আঁটোসাঁটো,
শেষের দিনের প্রহর গোনা।।

জীবন চলে জীবন খাতে...
দেখা হবেই শেষ স্টেশনে...
যাওয়ার পথ তো একটাই...
তখন আমি কার!! কে আর আমার ....



 *চৈতি- র কবিতা*
  
আঁকা যন্ত্রণা

অশান্ত মনের তরঙ্গ আঁকে অস্থিরতা!!
বার বার লুকাতে চেয়েও পারে না রাখতে গম্ভীর নীরবতা,
শারীরিক কারখানার জীবন যন্ত্রপাতি
নেড়ে চেড়ে ঠক ঠকা ঠক শব্দ বাজায়।

খুঁজে পাওয়ার ইতিহাস উৎসের কাছে
করে আত্মসমর্পণ,
অপূর্ব ভালো থাকার কথারা ছটফট করে
অনন্য লালিমায়!
অসহ্যতার জাল ছিঁড়ে তবুও মন বেরোতে চায়।

হয়তো ঠিকানা চায় একটা সহজ রাস্তায়,
তবু রাস্তাটা বেঁকে পথ খুঁজে চলে যায়
নিজের ঠিকানায়।
কখনো কখনো ভাবি সেই রাজপথের ইতিকথা... !

হৃদয় জুড়ে পসারী আলোক,
আলোকিত করে সম্মোহন
ফরফরাস জ্বলে ওঠে নিজের জায়গায়,
ইতিহাস ভোলে না,
কত শত হৃদয়ের দরজায় টোকা পড়ে, মানুষ
বাঁচতে ভোলে না।

ওই যে সমুদ্র কি ভীষণ টান তার, ছুঁয়ে দেখো
গভীরতার কথা লিখে দেবে ঠিকানায়,
না বলা কথাগুলো তরঙ্গের ধাঁচে নাড়িয়ে দেবে
এক লহমায়,
পৌঁছে যাও একবার তার তীর ছোঁয়া বিস্তৃত
পাওনায়।


*ফিরোজ হক্ - এর কবিতা*

অগোছালো জীবন 


এযাবৎ ১০১টি সিদ্ধান্তের পরিবর্তন
বইয়ের প্রতিটি পাতায় খুঁজে বেরিয়েছি
সমস্যার সমাধান।
সাদা পৃষ্ঠায় অঙ্কন করতে চেয়েছি ভবিষ্যত
মুঠোফোনের কীপ্যাডের দিকে তাকিয়ে
কি লিখবো ভুলে যাই।
তারপর ফেসবুক পেজ স্কিপ করতে করতে
কত সময় পেরিয়ে যায়
তার কোনো হিসেব-নিকেশ থাকে না।
হঠাৎ মশা হুল ফোটালে জ্ঞান ফেরে
সিদ্ধান্ত স্থির করতে বসে পড়ি...
রুটিনমাফিক জীবন গড়ে তুলেও
সমস্তই অগোছালো থেকে যায়...



*প্রসেনজিত রায় - এর কবিতা* 


মধুমেহ


      মধু থেকে মোহ তুলে রাখার চেষ্টা 
      কেমন যেন অস্বাভাবিক 
      মানুষের লিঙ্গ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক

      জানালার পর্দা সরিয়ে রাখলে শরীর বিষময় হয়ে ওঠে 
      যেভাবে আমরা চুমু খাচ্ছি 
      আমাদের নীলকণ্ঠ পাখি হতে বেশী দেরি নেই 

      রক্ত, রাজনীতি, শরীর, অর্থ 
      কেমন যেন চকোচ্চল বসে গেছে চারিদিকে 
      লিঙ্গ থাকলেই ফাগুন নেমে আসে যখন তখন 

      নিজেকে 'পুরুষ' প্রমাণ করতে কাপড় পড়ে সভ্যতা 
      আমি জানি তার লিঙ্গ থাকাটা অপরিহার্য নয় 
      আসলে আমার সবাই অন্তর্বাসে লুকিয়ে রাখি 
                                              গুপ্ত মধুমেহ রোগ ।
                                                      

*তানিয়া ব্যানার্জীর কবিতা* 

এক্স-রে

রোদেলা বিকেল তাম্রবর্ণ হলে!
আমি হরিনাম বেচি ওজনে ওজনে,
কুয়াশা বিনুনি মাথায় জড়িয়ে বিবর্নতায়;
ঠোঁটের কোণে একটুকরো বিজলি অমলিন।
কখনো কি পেসমেকার চিড়ে দেখেছে কেউ!
মেপেছে ধড়কন! আতসবাজির আড়ালে
রক্তমাংসের আর্তনাত!
ধু ধু কুয়াশায় অস্বচ্ছ ওরাও,অল্প নিকেল আস্তরণ।


ডুব দাও হরি,ডুব দাও...তোমার খোলের শব্দে অসুস্থ দাঁড়িপাল্লা-
তোমার কড়তাল ধ্বনি আটকে দেয় গতিপথ।
আমি নীলা খুলে পড়েছি হলদে পোখরাজ,
মেখেছি কুয়াশা বিকেল, আখতারি ঘরানায়-
আমি হরিনাম বেচি, নিষিদ্ধ সীমানায়।



           ****অ  নু  গ  ল্প****

            ঈশ্বরহীন
  
            অম্বরীশ ঘোষ


ইদানীং বেশ নামডাক হয়েছে সীমান্ত দাশগুপ্তের। হওয়াটাই স্বাভাবিক।  বেশ জটিল চারটি কেসে জয়লাভ পরপর।  পাঁচ নম্বর কেসটা তো হাওয়াটাই বদল করে দিয়েছে। কেউ ভাবেনি এতটা অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে। এই অসাধ্য সাধনের জন্যই তো দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই ছোটবেলা থেকে।  প্রত্যন্ত ছোট গ্রাম - ছোট চালাঘর-   ভীষণ গরীব বাবা মা । তার ওপর বসত বাড়িটা নিয়েও আইনি জটিলতা।  চার ভাইবোনের কষ্টের সংসারের মধ্যেও বড় হওয়ায় ইচ্ছেটাকে খুব গুরুত্ব দিত ওর বাবা।  কাপড়ের ছেঁড়া জায়গাটা কুচিতে দিয়ে মা ওর বাবাকে বলত,  'কাপড় না কিনে টাকাটা সীমান্তর পড়াশোনায় দিয়ে দাও'। মাধ্যমিক পাশের পর জমানো টাকাটায় মেয়ের বিয়ের কথা না ভেবে  ওর বাবা ওর পড়াশোনার জন্যই খরচ করে গেছে। যেদিন ও ওকালতি পাশ করে, সেদিন ওর বাবার আনন্দ কে দ্যাখে!  মুখ বন্ধ রেখে চোখ দিয়ে সবাই কত্তো বলেছে! যাইহো, নামডাক, বিয়ে, মেয়ের জন্ম,  টাকাপয়সার নেশা -সবকিছুর মধ্যে সীমান্ত পেঁচিয়ে গিয়েছে । গ্রামের শৈলেন কাকা মাসে দু' একবার শহরে আসে ওনার থেকে দুই পরিবারের খোঁজখবর সংগ্রহ চলে। পাঁচ নম্বর কেসের জয়লাভের পর আজ  ছোট্ট একটা পার্টি চলছে বাড়িতে। এমন সময় শৈলেন কাকা দেখা করতে এল।বাইরে এল সীমান্ত । কাকার থেকে শুনতে পেল যে ভাল উকিল না থাকায়  দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতায় খোয়া গেছে গ্রামের বাড়িটা।  মনে পড়ল যে বাবা শৈলেন কাকাকে দিয়ে বারকয়েক খবর পাঠিয়েছিল  সীমান্তকে কোর্টের কেসটা দেখার জন্য।  কিন্তু সীমান্ত সময়টাই করে উঠতে পারেনি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল সীমান্তর। অসম্ভবরকম একটা অসহায়তা গিলে ফেলল ওকে। ও স্পষ্ট দেখতে পেল ওর জন্য জীবন থেকে ঈশ্বর ও তীর্থক্ষেত্র এক ঝটকায় সরে গেল। পার্টির রোশনাই ছেড়ে  একটা অন্ধকার গলি দিয়ে উদভ্রান্তের মতো হাঁটতে লাগলো সীমান্ত।
             ------------------------------   

   ********ক  বি  তা********


*অনন্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা*

বিদ্যাসাগর 


' বর্ণপরিচয় '
এখনো পড়া হয়ে ওঠেনি 
স্বরবর্ণ উচ্চারণে হাত পা কাঁপছে থর্থর্ 
ব্যঞ্জনবর্ণ  স্পর্শ করলেই একশো দশ ডিগ্রী জ্বর 

এখন  দিন শুরু হয়  একান্নটা মিথ্যা দিয়ে 
একশোটা গুজবে আলো ছায়ার যুদ্ধ প্রবল 
  আর দিনান্ত  একশো আট  নাটকে 

হে মহর্ষি এই শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা নয় ...
এই ভালোবাসা ভালোবাসা নয় ...
এর থেকে ঢের ভালো ছিল ভুলে যাওয়া 
এর থেকে ঢের ভালো ছিল উপেক্ষা 
এর থেকে ঢের ভালো ছিল  কালো পতাকা তুলে ধরা 

শ্রদ্ধা জানানোকে যারা খেলা মনে করে 
আমি জানি কোনওদিন ক্ষমা করতে 

পারবেন না আপনি তাদের ...


*রানা সরকারের কবিতা*

মাথুর

অনন্ত জ্যোৎস্না চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে আমার উঠোনে
তুলসী তলায় জ্বেলেছি প্রদীপ... ।
আমি এবারেও খালি পায়ে, নগ্ন হাতে
কাঁটা পরিষ্কার করছি,
                       অকস্মাৎ ফুৎকারের পূর্বে, 
তুমি ফিরবে বলে!

গল্প হঠাৎ শেষ হয়ে গিয়েছিলো
অকস্মাৎ ফুৎকারে প্রদীপ নেভার মতো;
নেমে এসেছিল অমারাত্রি, 
ক্ষণিকের অতিথি ছিলেন অক্রূর!
আর, আমি এখনও দীর্ঘ অবসাদে ভুগছি
তুমি তব মথুরা চলে যাওয়ার পর!

এখন উঠোন জুড়ে চাঁদের জ্যোৎস্না নেমে এলে
ভেসে ওঠে, নদীর ধারের হাত পিছলানো শৈশব
সবুজ মাঠে কাটানো মুখোশহীন কৈশোর, আর
সেই রাত, তুমি-আমি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে
যেখানে নিশ্চিত উজ্জ্বল হলুদ স্বপ্ন ছিলো...!

আজকাল ডালপালাহীন গাছে হেলান দিয়ে -
চলছে নিত্য ঘুমখুন, জোনাকির শোক!
আর আত্মা কেঁদে ওঠে গভীর অসুখে!


*যীশু চক্রবর্তীর কবিতা*

শিল্পী 

পুরোনো প্রেম মদে ঢেলে নিই 
ছিবড়ে চিবিয়ে বসুন্ধরা মত্ত 
কানাগলিতে থমকে পরমাত্মা 
পরমাণু হারিয়ে যায় বিস্মৃতির গভীরতায়।। 

  চিন্ময়ী মেঘনাদ স্বপ্ন দেখে 
কালবৈশাখীর পৌরানিক অভব্যতার
নিভৃতে সূর্যের চুম্বনে তুমি যখন স্নাত
আমি তখন এক চিমটি চাঁদ কে আঁকড়ে ধরি।।

সদ্য ভূমিষ্ঠ  জীবন, নগ্ন শিশু, আর ঈশ্বর 
বহু আকাঙ্ক্ষিত ঠোঁট আর পেয়ালার মিলন 
সাক্ষী থাকে লোভিষ্ঠ পার্থিব  যৌনতার
বেঁচে থাকে একটি আর্ট গ্যালারি আর শিল্পী।।


*কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর -এর কবিতা* 

আমার ভারত 

ঝরে যাওয়া পাতার নিশ্বাস জানে শিশিরের গন্ধ
মাটি বয়ে চলে কালচে দাগের ভার
ছাওনিহীন নৌকায় গামছার স্রোত এঁকে যায় বৃষ্টি
বাতাসে কিছু সুর।সাদা পাতার আলাপচারী
রোদ এসে বুক স্পর্শ করে নাম-গোত্রহীন বেওয়ারিশ লাশটার
বাতানুকূল ঘরে মেদ জমে যায় রিভলবিং চেয়ারে
কোর্ট আর কাবাব জমে যায় আইসে 
ভারতবর্ষের বুকে কিছু অপাংক্তেয় ইমাম দরকার 
যে দুহাত তুলে বলবে-- 
মাটি চাপা পড়ে যাক্ অযোধ্য নামক শব্দে
পুড়ে যাক সমস্ত মিথ্যাচারের স্তাবকতা
মানচিত্র থেকে মুছে যাক্ গুজরাটের লাল নিশান
দমকা হাওযায় উড়ে যাক্ মাংস মার্কা পোস্টার
এটাই আমার দেশ।আমাদের ভারতবর্ষ


সম্পাদক- তাপস দাস
    tapsds00@gmail.com  

মন্তব্যসমূহ

  1. বাঃ খুব সুন্দর। এমন ভাবেই আরো এগিয়ে চলুক চা পাতা...

    উত্তরমুছুন
  2. খুব খুব ভালো এই সংখ্যা । সকলকে শারদীয়ার আগাম শুভেচ্ছা । চা পাতার জন্য শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা সবসময়।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা-পাতা ৯১