দোতারা।। ২য় পর্ব।।




'কুচবিহারত হামার বাড়ি
ঘাটাত দেখঙ ভইসা গাড়ি
ভইসা গাড়িত ছই নাই
ভইসের গলাত  ঘান্টি নাই
গাড়ি চলে রে এলা কাদো রে পন্থে'
লোকগান ভাওয়াইয়া আমাদের প্রাণ। আমাদের সম্পদ।লোকজীবনের আবহমান যাপনের ছবি ধরা থাকে এই গানে। কি এক মায়া! কি এক ম্যাজিক এই গানে!
কত গুণী,কত নামী ও অনামী শিল্পীরা আবহমান কাল ধরে নিরন্তর ভাবে এই লোকগানকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।এখনো তা বহমান।
   নজরুল ইসলাম। লোকমুখে নজরুল গিদাল।পেশায় পুলিশকর্মী নজরুল ইসলাম একজন জাত শিল্পী।নিরলসভাবে ভাওয়াইয়া নিয়ে ভাবেন তিনি।নিজেকে বদলান বারবার।নাটাবাড়ির নজরুল গিদাল শুরু করেছিলেন লোকনাট্যে অভিনয় ও নাচের মধ্য দিয়ে।পেয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ,মালতী নারায়ণ,জনাব আলাউদ্দিন সরকার,পর্বানন্দ দাসের সান্নিধ্য।পরবর্তীতে আব্দুল জব্বার,কেরামত আলীর বন্ধুত্ব তাকে ঘিরে ধরেছিল।নিজে গান লেখেন নিয়মিত।সুরারোপ করেন নিজেই।অসম্ভব জনপ্রিয় আজ তিনি।
   'মনের আয়না' ভীষণ প্রচারিত গানের এলব্যাম তার।উত্তরবঙ্গ অতিক্রম করে কলকাতা,অসমে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি।
নজরুল গিদাল কেবলমাত্র লোকগান গান না। তিনি প্রতিমুহূর্তে গান নিয়ে সাধনা করেন। গান নিয়েই বসত করেন। তার গায়নরীতি,গানের ঘরানা একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকের। গানবাড়ির ভিতর তীব্র এক স্তব্ধতার মতন নেমে আসে নজরুলের গান-
'বুড়ি তোর্সার বাঁশের সাঁকো দেখি শুনি পার হন
যাও খায়য়া যাও ভরা বাটার পান
যাও খায়য়া যাও নবীন বাটার পান'
শূন্য পাথারবাড়ি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখনো শুনি ভেসে আসছে গিদাল নজরুলের গান-
'হামরা প্রান্তবাসী কুচবিহারী
কুচবিহারের গান গাই'
কোচবিহারের রাজকন্যা জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবী কোচবিহারে এলে শেষের দিকে ভাওয়াইয়া শুনবার জন্য ডেকে নিতেন নজরুল ইসলামকে।
নজরুল গিদাল আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ। তার সঙ্গে ঘুরেছি কত কত লোকগানের আসরে। দেখেছি তার প্রবল নিষ্ঠা আর সুরের জাদু আবিষ্ট করছে মাঠ ভরা দর্শকদের।
একজন শিল্পীর এটাই তো বৃহৎ প্রাপ্তি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চা-পাতা ১০০

চা পাতা সাপ্তাহিক