চা- পাতা ৯৫
সম্পাদকীয়
একটা জীবন যেন হাজারটা উৎসবের সমাহার । একটা উৎসবের বাঁশ খুলতে খুলতেই অন্য একটি উৎসব এসে অপেক্ষা করে থাকে । ধোঁয়া-ধুলো আর দূষণগুলোই মাঝখানে দুঃখ হয়ে থেকে যায় । শৈশব-কৈশোর-যৌবন এর পর বার্ধক্য হল সেই ক্ষন যেখানে আলোগুলো নিভিয়ে দেওয়া হয় । সারামাঠ খাঁ - খাঁ করে , আবর্জনাময় একা হয়ে যায় ।
✍️কবিতা★★★★★★★★★★★★
পাবলো শাহি
ফুলচোর
তুমি আমার পুরোনো বন্ধু, নাম ‘আর্তনাদ’ আর নতুন বন্ধুর নাম
বিস্মৃতি । হাজারো মিথ্যের মধ্যে এই ‘তুমি’ নামক প্রার্থনার পোকাগুলি জেগে থাকে মনে
। যদিও ঊনিশ শ’ পঁচাশি সাল থেকে তিন হাজার সাল পর্যন্ত বেঁচে আছি – এই উৎকণ্ঠা নিয়ে
। ভুলের পৃথিবী যার নাম দিয়েছে ‘ নীল রঙের ছাতা’ । তারপরও আমি পাপের গোলার্ধে
গোলাপ ও কাঁটা খুঁজতে বেরোই । যদিও বিস্মরণের মন্ত্রে লিখে রাখি ধু ধু সেই মুদ্রা
বালিকার নাম । আমার জন্মের একুশ বছর পর বাঘের তলপেটে তার ছবি পেয়েছিলাম । ‘সে’- কুমারীর
বক্ষদেশ থেকে বেরিয়ে এসে বলেছিল ‘এখন ফুল চুরির বয়স’ – সেই থেকে তাকিয়ে আছি কবে
ফুলচোর হবো সেই আশায় । তিন হাজার সাল অব্দি আমার এই দ্রাঘিমা ভ্রমণ । ভুলের
পৃথিবী হয়তো এর নাম দেবে ‘সর্বনাশ’ । তাই ভালো, আমি ‘সর্বনাশ’ হতে চাই, হতে চাই
বোবারাত্রির বন্ধু...
★★★★★★★★★★★★★★
সুকৃতি সিকদার
রূপান্তর
তৃষ্ণা মিটাতে আসা জলও
ততটা পিপাসি হয়ে আসে।
তারও গলা কাঠ হয়ে যায়।
হাত যায় গুটিয়ে যখন
চার পায়ে হাঁটা চলা করি,
চোখ ঠিক দেখেও দেখে না
নাক শুধু বেশি বলে যায়।
কান দুটা খাড়া হয়ে ওঠে, দাঁড়াটাও।
কেবল যে মাসটা ভাদ্র নয়!
মাড়ি ফাটা রক্তের চুমুরি চুমে হায়
তব মুখে হয়েছে রসালো হাঁড়িটিও।
আত্মার অসুখ লেগে মুখও মুখোশ হয়ে ওঠে।
সুখের দোদোমা ফেটে গেলে, একদিন
ভালোবাসা ঘৃণার দরজা খুলে দ্যায়।
★★★★★★★★★★★★★★★
মানুষ
আগুন থেকে আরেকটি আগুনে
লাফ দিয়ে চলে গেল সমাজ
তুমি যাকে সোসাইটি বলো সে আসলে
ভাঙা প্যাকিং বাক্স
হ্যারিকেন, নীল কালি, বোতাম, লাশ
কিচ্ছু রাখা যাবে না তাতে
তুমি একটি হাওয়া ঘেরা পাখিরালয় বানাও
সমাজের হাতে মার খেতে খেতে
মার খেতে খেতে
শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাবে যেসব মানুষ
তারা সেখানে দানাপানি দিক
পাখিরা যেদিন পড়তে শিখবে
সেদিন থেকেই নির্বাচন বিধি
লাগু হয়ে যাবে
যারা মানুষের পক্ষে থাকবে, থাকুক
তুমি কিন্তু পাখির আওয়াজের সঙ্গ ছেড়ো না
মনোনীতা চক্রবর্তী
সঞ্চয় এবং সংক্রমণ
নিরন্তর থেকে যাওয়া
একটা তুমুল !
ঘোর কী ঘুম সে প্রশ্ন থাক
কত কিছুই তো তোলাই থাকে
অগভীর দু'চোখে! তাই ঘোর কী ঘুম,
এ নিয়ে কোন তর্ক নয়!
ঘোর ও ঘুম দুটোই তীক্ষ্ণ অথবা
মোলায়েম সত্যি যারযার অবস্থানে!
সরে গেছে অর্জুনের লক্ষ্যভেদী দৃষ্টি!
অথবা আঙুলের প্রাচীর উঠেছে দৃশ্য অথবা দৃষ্টির ভেতর !
নিরন্তর সন্ধানী চোখ ছুঁতে চায় এক ফালি বিশ্রাম!
ব্র্যান্ডেড কাজলে -মাস্কারায় ভয়ঙ্কর এক সংক্রমণ!
তেপান্তর পেরিয়ে ফেরার কাজলা দিদি!
নেই আর ইস্কাবনের অফুরান গল্পমালা!
জ্বালা -জ্বালা-জ্বালা!
নিরন্তর থেকে যাওয়া এক তুমুল....
ঘোর না ঘুম সে প্রশ্ন থাক
শুধু থেকে যেও বিলাবলের সবকটা শুদ্ধ স্বরের মতোই
নিরন্তর...
নিরন্তর...
নিরন্তর...
জীবন পুড়ে ছাই
ধ্বংসস্তূপ উপচে বেরিয়ে আসে অসংখ্য হাততালির খাজানা
★★★★★★★★★★★★★★★
রাজীব মৌলিক
অবিকল
সমুদ্র হাঁ করে আছে আমার দিকে
যেন তার প্রচুর খিদে
যে কোনো কিছুর বিনিময়ে খেতে চায় আমায়
অথচ জলে আমার ভীষণ ভয়
যেভাবে অনুশীলন ছাড়া একটার পর একটা ঢেউ
উথলে পড়ে
মনে হয় তারা ভেঙে পড়ার জন্য সদাপ্রস্তুত
শেষবার দীঘার সমুদ্রকে কাছ থেকে দেখেছিলাম
যদিওবা ততোটা উত্তাল ছিলো না
তবু বারংবার মনে হচ্ছিল
সমুদ্র হাঁ করলে প্রেমিকার মতো দেখায়
★★★★★★★★★★★★★★★
শিঞ্জন গোস্বামী
মুক্তি
তোমাকে দেখছে স্বজনবিয়োগ, গ্রামছাড়া পথ
চাঁদের শিয়রে নামিয়ে রেখেছি সমূহ বিপদ
জ্যোৎস্নার পারে জমেছে অস্ত্র, নিশিকোলাহল
পথে ও বিপথে ঘন হয়ে আসা দুচোখের জল
তোমাকে দেখছে যেরকম দ্যাখে রূপসী আয়না
মৃতের শরীরে ক্রমশ বিলীন ঘরের চিহ্ণ
সেই সঙ্কেত নীচু হয়ে আসে জলের কিনারে
সেই সঙ্কেত ছন্দে সঠিক লেখাও যায় না
কবিদের হাসি ফেটে পরে শুধু শহীদ মিনারে
পরাধীন দেশে আঙ্গিকে কেউ মুক্তি চায় না
★★★★★★★★★★★★★★★
চা - পাতা'র আজকের সংখ্যায় ধারাবাহিকটি প্রকাশ করা সম্ভব হলো না । ধারাবাহিকের লেখক সমর দেব (কবি, প্রবন্ধিক, ঔপন্যাসিক) শারীরিকভাবে খানিকটা অসুস্থ থাকায় আজকের কিস্তিটি লিখে উঠতে পারেননি। পরবর্তী সংখ্যা থেকে আবার ধারিবাহিকটি প্রকাশ পাবে ।
চা- পাতা
চতুর্থ বর্ষ* সংখ্যা-৯৫
প্রচ্ছদ ঃ উদয় সাহা
সম্পাদনা ঃ তাপস দাস
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন